দীর্ঘ ৯ মাসের লড়াই-যুদ্ধর রক্তগঙ্গা পেরিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি পায় একটি স্বাধীন জাতিসত্তা, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা। এদিন দুঃশাসন, অত্যচার, নির্যাতনের যাতাকল পেড়িয়ে বাংলার পূব আকাশে ওঠে বিজয়ের আলো। যে আলো স্বাধীনতা হয়ে প্রবেশ করে বাংলার প্রতিটি ঘর ও আঙিনায়। বাঙালি আজ ৫২তম বিজয়োৎসবে মত্ত। বাংলাদেশ পা দেবে ৫৩ বছরে।
শনিবার সকাল থেকেই রাষ্ট্রীয়সহ দেশের প্রতিটি পর্যায়ে শুরু হবে আনন্দ উদযাপন। যদিও চলতি বছরের শেষে ও নতুন বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কিছু বিধি থাকলেও প্রাণখুলে উদযাপনে মাততে গণমানুষের কোনো বাধা নেই।
এদিকে শুক্রবার রাত থেকেই বর্ণিল হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। জাতীয় সংসদ ভবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার সদর দপ্তর-কার্যালয় সাজানো হয়েছে নানা রঙে। সেজেছে দেশের ছোট-বড় শহরগুলোও।
১৬ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা। তবে এ অর্জনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনা, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের করুণ ইতিহাস। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার যে স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে তা পূর্ণতা পায়।
তারই নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনায় পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, এই হোক অঙ্গীকার- জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশকে ‘স্বল্পোন্নত’ দেশে উন্নীত করেন, আর আমরা মাতৃভূমিকে ‘উন্নয়নশীল’ দেশের কাতারে নিয়ে গেছি। স্বাধীনতার পর বিগত ৫২ বছরে আমাদের যা কিছু অর্জন তা জাতির পিতা এবং আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হয়েছে।
‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে, ইনশাল্লাহ।
বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মাথাপিছু আয়, বিদ্যুৎ, কৃষি, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব ক্ষেত্রে অভাবনীয় গতি অর্জন করেছি। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মর্যাদাশীল ‘উন্নয়নশীল’ দেশে উন্নীত হওয়ার জাতিসংঘের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে।