খুনে ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়ে আবার সেই রেকর্ড ভাঙা সানরাইজার্স হায়দরাবাদ আজ পাত্তাই পায়নি কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলারদের কাছে। ফাইনালের মঞ্চে আন্দ্রে রাসেল-মিচেল স্টার্কদের দারুণ বোলিংয়ে অল্প রানেই গুটিয়ে যায় তারা।
এই রান তাড়ায় খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি কলকাতার। জয় তুলে নিয়ে দশ বছর পর তারা উঁচিয়ে ধরে আইপিএলের তৃতীয় শিরোপা।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ফাইনাল ম্যাচে আজ হায়দরাবাদকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে কলকাতা। চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ১৮ ওভার ৩ বল খেলে ১১৩ রানে গুটিয়ে যায় হায়দরাবাদ। জবাব দিতে নেমে ৫৭ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে কলকাতা।
প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই অভিষেক শর্মাকে হারিয়ে ইনিংস শুরু করে হায়দরাবাদ। পরের ওভারে বিদায় নেন আরেক ওপেনার ট্রাভিস হেড। তিনে নেমে এদিন সুবিধে করতে পারেননি রাহুল ত্রিপাঠি। স্রেফ ৯ রান আসে তার ব্যাট থেকে। চতুর্থ উইকেটে ২৬ রানের জুটি গড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেন এইডেন মার্করাম ও নিতিশ কুমার। কিন্তু নিতিশকে ১৩ রানে ফিরিয়ে জুটিটি ভেঙে দেন হারশিত রানা।
অপরপ্রান্তে থাকা মার্করামও খুব বেশিক্ষণ টেকেননি। আন্দ্রে রাসেলের বলে স্টার্কের হাতে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন ২৩ বলে ২০ রান করে। এদিন ব্যাট হাতে সফল হননি হেইনরিখ ক্লাসেনও। ১৭ বলে ১৬ রান করে হারশিতের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। এরপর দ্রুত বিদায় নেন শাহবাজ আহমেদ, আবদুল সামাদ ও জয়দেব উনাদকাট। তবে শেষ পর্যন্ত লড়ে যান প্যাট কামিন্স। ১৯ বলে ২৪ রান করে তিনি রাসেলের শিকার হলে গুটিয়ে যায় হায়দরাবাদের ইনিংস।
কলকাতার হয়ে প্রত্যেক বোলারই উইকেটের দেখা পান। ২ ওভার ৩ বলে স্রেফ ১৯ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন রাসেল। দুটি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক ও হারশিত। একটি করে শিকার ধরেন ভাইভাব আরোরা, সুনিল নারিন ও বরুণ চক্রবর্তী।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই নারিনকে হারায় কলকাতা। তবে শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ভেঙ্কাটেশ আইয়ার। গুরবাজ ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট করতে থাকলেও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন ভেঙ্কাটেশ। স্রেফ ৪৫ বলে ৯১ রানের জুটি গড়ে দলকে তারা নিয়ে যান জয়ের কাছাকাছি।
নবম ওভারে শাহবাজের বলে এলবিডব্লিউ হন গুরবাজ। ৩২ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। একটু পর ২৪ বলে ফিফটির দেখা পান ভেঙ্কাটেশ। আর নিশ্চিত করেন দলের জয়ও। ২৬ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৩ বলে ৬ রানে অপরাজিত থাকেন শ্রেয়াস আইয়ার।
ফাইনালে ওঠার পর কলকাতা যেভাবে চ্য্যাম্পিয়ন হলো-
১. মিচেল স্টার্কের প্রথম স্পেল— প্রথম কোয়ালিফায়ারের মতো ফাইনালেও প্রথম স্পেলে আগুন ঝরালেন স্টার্ক। প্রথম ওভারেই অভিষেক শর্মাকে আউট করেন তিনি। পরের ওভারে আউট করেন রাহুল ত্রিপাঠিকে। প্রথম স্পেলে ৩ ওভারে ১৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন স্টার্ক। তাতেই কেকেআরের জয়ের ভিত তৈরি হয়ে যায়।
২. আন্দ্রে রাসেলের বোলিং— স্টার্ক শুরুটা করলে শেষটা করেন আন্দ্রে রাসেল। বল করতে এসে প্রথম ওভারেই এইডেন মার্করামকে আউট করেন তিনি। পরের ওভারে আউট করেন আব্দুল সামাদকে। শেষ করেন প্যাট কামিন্সের উইকেট দিয়ে। ২.৩ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন রাসেল। তার দাপটেই ১১৩ রানে অল আউট হয়ে যায় হায়দরাবাদ।
৩. দুর্দান্ত ফিল্ডিং— ফাইনালে পুরো ম্যাচ জুড়ে খুব ভালো ফিল্ডিং করেছেন কেকেআরের ক্রিকেটারেরা। ৩০ গজ বৃত্তের ভিতরেই হোক, বা বাউন্ডারিতে, সব জায়গায় রান বাঁচান ফিল্ডারেরা। ভালো কিছু ক্যাচ ধরেন তারা। ভালো ফিল্ডিংয়ে চাপে পড়ে যায় হায়দরাবাদ।
৪. শ্রেয়াস আইয়ারের অধিনায়কত্ব— আরও একটি ম্যাচে দুর্দান্ত অধিনায়কত্ব করেন শ্রেয়াস আইয়ার। টস হারা ছাড়া কিছু ভুল করেননি তিনি। পেসারেরা ভালো বল করছেন দেখে দলের সব থেকে ভালো বোলার বরুণ চক্রবর্তীকে মাত্র ২ ওভার বল করান শ্রেয়াস। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নাম নয়, কাজের উপর গুরুত্ব দিতে হয়।
৫. বেঙ্কটেশের আইয়ারে ব্যাটিং— ১১৪ রান তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই আউট হন সুনীল নারাইন। আরও একটি উইকেট পড়লে চাপ পড়ত কেকেআর। কিন্তু বেঙ্কটেশ আইয়ার তা হতে দিলেন না। ব্যাটিংয়ে নামার পর থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলেন। ২৬ বলে ৫২ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন তিনি।