২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রোডম্যাপ খুব স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মাঝেও নির্বাচন হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা এটা আলোকপাত করেছেন। নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যেই।
শফিকুল আলম বলেন, সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ নির্বাচন কমিশন দেবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে স্কুল কলেজে বদলি পদোন্নতিতে ব্যাপক ঘুষ লেনদেন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষা খাতের দুর্নীতি বন্ধ করা হবে। সেই সঙ্গে পুরো শিক্ষাখাতের গুণগত পরিবর্ত আনতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।
শিক্ষা কমিশন হবে কিনা এমন প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, কমিশনের বিষয়ে বলা যাচ্ছে না তবে সরকার এরই মধ্যে জরুরি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ক্লাস নাইন এবং ক্লাস টেনের টেক্সট বুক পরিমার্জন করে আধুনিক করা হবে।
এর আগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে।
আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটা দাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।
ড. ইউনূস বলেন, প্রথমে সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। এটা এমনিতেই কঠিন কাজ। এখন কাজটা আরও কঠিন হলো এজন্য যে গত তিনটা নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল না। ভোটার তালিকা যাচাই করার সুযোগ হয়নি কারোর। গত ১৫ বছরে যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়েছে তাদের সবার নাম ভোটার তালিকায় তোলা নিশ্চিত করতে হবে, এটা একটা বড় কাজ।
তিনি বলেন, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর এখানে গলদ রাখার কোনও সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন পর এবার বহু তরুণ-তরুণী জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। অতীতে তাদের সে অধিকার এবং আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তাই এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটদান একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। এই অভিজ্ঞতাকে মসৃণ করার সব আয়োজন করতে হবে। আমার একান্ত ইচ্ছা এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের তরুণ-তরুণী ভোটারেরা শতকরা ১০০ ভাগের কাছাকাছি সংখ্যায় ভোট দিয়ে একটি ঐতিহ্য সৃষ্টি করুক। নির্বাচন কমিশন এবং সব সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার আহ্বান সবাই মিলে আমরা যেন এই লক্ষ্য অর্জনে নানা প্রকার সৃজনশীল কর্মসূচি গ্রহণ করি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন থেকে সবাই মিলে এমন একটা ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে পারি যে, স্থানীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে সব কেন্দ্রে প্রথমবারের ভোটাররা ১০০ শতাংশের কাছাকাছি সংখ্যায় ভোটদান নিশ্চিত করবে। এটা নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যতে কোনও সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সাহস করতে পারবে না।
তিনি বলেন, নতুন ভোটার ছাড়াও যাদের আগে থেকে ভোটার তালিকায় নাম থাকার কথা ছিল, তারা ভোটার তালিকায় আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ মনোযোগ দিয়ে ভুয়া ভোটারদের তালিকা থেকে বের করে দিতে হবে।
এছাড়া মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনও জানিয়েছেন, যেকোনো সময় জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে কমিশন প্রস্তুত আছে।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে ঘোষণা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুত। যখনই তিনি চান, আমাদের তরফ থেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। জাতীয় নির্বাচনের ষোলোআনা প্রস্তুতি চলছে। এ মুহূর্তে স্থানীয় নির্বাচন করা নিয়ে কোনো চিন্তা আমাদের নেই।
সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে সিইসি বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে। অতীতের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে যদি কোনো অনিয়ম হয়, কোনো প্রার্থীকে জেতানোর জন্য বা কাউকে হারানোর জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো সীমানা পুনর্নির্ধারণ হয়ে থাকে, সেটা কমিশন দেখবে।
বিদ্যমান ভোটার তালিকায় নির্বাচন হবে, নাকি নতুন ভোটার তালিকা করবেন -এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, দুই মাস পর ইসির হাতে একটি নতুন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা আসবে। এরপর বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সব ধরনের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে।