মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির উপপরিচালক (প্লানিং, রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন) রনজিত কুমার সরকার বলেন, অনন্য সমাজকল্যাণ সংস্থার বিভিন্ন কার্যালয়ে পরিদর্শনের সময় নথিপত্র পর্যালোচনা করে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেই অনুযায়ী প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
এমআরএর তদন্তে উঠে এসেছে, অনন্য সমাজকল্যাণ সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজ আলী কাদেরী প্রতিষ্ঠানের এফডিআর করা প্রায় ৮ কোটি টাকা তুললেও প্রতিষ্ঠানে জমা দেননি। নিজের নামে, স্ত্রীর নামে এবং কর্মীদের নামে প্রায় ৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ৩০টির বেশি অনিয়ম, দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের চারটি গাড়ি মাহফুজ আলী কাদেরী নিজে ব্যবহার করতেন। কর্মকর্তারা এমআরএর প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, চাকরি রক্ষার্থে এ ধরনের কাজে তাঁরা রাজি হয়েছিলেন। তবে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা এবং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহফুজ কাদেরী বলেন, ২০১০ সালের পর তিনি আর এই প্রতিষ্ঠানের কোনো দায়িত্বে নেই। অর্থ আত্মসাতের প্রশ্নই আসে না। এমআরএ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছে। আর পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
মাহফুজ আলী কাদেরীর স্ত্রী বর্ণা খাতুন বর্তমানে অনন্য সমাজকল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মিথ্যা। ঘটনার সময় তিনি প্রতিষ্ঠানের কোনো দায়িত্বে ছিলেন না। মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে দোষারোপ করছে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি। পরে তারা আবার চিঠি দিয়ে বলেছে, মাহফুজ আলী কাদেরীকে তারা অভিযুক্ত করেনি। পিবিআইয়ের তদন্তের বিষয়ে বর্ণা খাতুন বলেন, কোনো সাবেক কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে না।
অনন্য সমাজকল্যাণ সংস্থা গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে পাবনা অঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অন্যান্য ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের মতোই তারা ঋণ দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি পিকেএসএফ এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে আমানত সংগ্রহ করে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে।
পিবিআইয়ের তদন্ত
পিবিআই বলছে, তুরানী সুলতানা নামের এক নারী ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে এই অনন্য সমাজকল্যাণ সংস্থার ফিল্ড অফিসার হিসেবে কাজে যোগ দেন। তিনি পাবনা আরবান শাখায় ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। করোনা মহামারির কারণ দেখিয়ে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে তিনি প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটিসহ মোট ৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা দাবি করেন। এই টাকা দাবি করার পরই তাঁর বিরুদ্ধে ৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। প্রতিষ্ঠানটির পাবনা আরবান শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক হরিপদ সরকার গত ডিসেম্বরে তুরানী সুলতানা এবং তাঁর স্বামী আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
পিবিআই বলছে, এটি একটি মিথ্যা মামলা। আত্মসাৎ করা টাকা সমন্বয় করতেই প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মীদের বিরুদ্ধে এমন মামলা দেওয়া হয়। মামলার বাদী হরিপদ সরকার এ বিষয়ে সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু রায়হান বলেন, শুধু তুরানী সুলতানা নন, আরও কয়েকজন সাবেক কর্মীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মিথ্যা মামলা করেছে অনন্য সমাজকল্যাণ সংস্থা। বাদী ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো আলামত উপস্থাপন করতে পারেননি। তিনি মামলায় বলেছেন, ২৪ জন সদস্যের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠানে জমা দেননি। তবে এ ধরনের অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।