ধান-চালের দাম বাড়ার গতি রোধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেছেন, চারদিনের মধ্যে আগের দামে না আনলে মজুতকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দাম না কমলে প্রয়োজনে চাল আমদানি করা হবে বলেও জানান তিনি।
বুধবার বিকেলে খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ধান-চাল বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধকল্পে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য টিম করেছি, কন্ট্রোল রুম খুলেছি। আমাদের অভিযান চলছে। আগামীকাল দেশের আটটি বিভাগে বেলা ১১টা থেকে অভিযান শুরু হবে। আজ যাদের ডেকেছি তারা সবাই কমিটমেন্ট করেছে। হঠাৎ যেমন লাফিয়ে দাম বেড়েছে, তেমনি কমাতে হবে। তারা কথা দিয়েছে, দ্রুত আগের দামে নামিয়ে নিয়ে আসবে। বিশেষ করে মোটা চাল বা আমন চালের দাম কমিয়ে নিয়ে আসবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা আমাদের কথা দিয়ে গেছে। সাথে সাথে অভিযান চলছে। অভিযানে যার কাছে মজুদ পাবো তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
আগামী চার দিনের মধ্যে যদি দাম না কমলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র বলেন, আমরা অভিযান শুরু করেছি। যার কাছে অতিরিক্ত মজুদ পাওয়া যাবে তাকে প্রচলিত আইনের আওতায় আনা হবে বা আমাদের যে বিশেষ ক্ষমতা আছে সেটা ব্যবহার করা হবে।
অবৈধ আড়ৎদারদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, যারা হাজার-হাজার মণ ধান আড়ৎদারির নাম করে বিনা লাইসেন্সে স্টক করছে, তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো উপায় নেই। আপনি মিল মালিক হয়েও যদি আপনার কাছে ধান মজুত থাকে তাহলে আপনাকেও ছাড় দেওয়ার কোনো উপায় নেই। আমার বাবা হলেও উপায় নেই।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। আমন মৌসুমের নতুন ধান বাজারে আসার পরপরই এভাবে দাম বেড়ে যাওয়াকে অস্বাভাবিক মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
আড়ৎদাররা বলছেন, ধানের দাম বাড়তি বলেই সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমন মৌসুমেই চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা বৃদ্ধি পাওয়াটা অযৌক্তিক।
রাজধানীর বাবুবাজার, মোহম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ও কারওয়ান বাজারের মতো বাজারে মিনিকেট ও বিআর-২৮ কেজিতে বেড়েছে ছয় টাকা। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ টাকা থেকে ৭৪ টাকা এবং বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এসব বাজারে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেড়ে নাজিরশাইল ৬২ থেকে ৮৮ ও গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫২ টাকা কেজি। পোলাওয়ের চালের দাম বেড়েছে আরও বেশি, ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে এক হাজার টাকা।
দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতেও চালের দাম বাড়তি। বাজারে চালের দাম বাড়তে শুরু করার তদারকিতে মাঠে নেমেছে খাদ্য অধিদপ্তর। চারটি টিম করে বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করা হচ্ছে। এছাড়া ওএসএম কার্যক্রমও তদারক করা হচ্ছে।
চালের বাজার তদারকিতে মাঠে নামছে চার টিমচালের বাজার তদারকিতে মাঠে নামছে চার টিম
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা কী অজুহাত দিয়েছে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, তারা অজুহাত দিয়েছে সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। মিল সব বন্ধ ছিলো, নির্বাচনের পর সবাই একসাথে মিল খুলেছে৷ এতে করে বাজারে বাড়তি চাপ পড়েছে। তাই দাম বেড়েছে।
আসল বিষয়টা কী, ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা মানুষ মাত্রই সুযোগ সন্ধানী। অতএব এটাও একটা সুযোগ বটেই
দাম বৃদ্ধির ঘটনাটি কোন স্তর থেকে ঘটেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ব্যবসায়ীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হয়েছে।
দাম না কমলে প্রয়োজনে আমদানির ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমদানির জন্য শূন্য শুল্কের জন্য ফাইল তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে বা আমাদের যখন প্রয়োজন হবে তখন আমরা আমদানি করবো।
অভিযান তো এর আগেও হয়েছে। তার ফলাফল কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা ফলাফল পেয়েছি। গত ৯ মাস চালের দাম স্থিতিশীল ছিলো। এটা মানতে হবে। আগামীকাল থেকে আবার কমবে৷ বাজারে কোনো চালের সঙ্কট নেই। চাল-গম মিলে ১৭ লাখ মেট্রিক টন মজুদ আছে। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে যদি সঙ্কট দেখা দেয় তাহলে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেব। চলতি মাসে টিসিবির মাধ্যমে আমরা এক কোটি পরিবার ৫ কেজি করে চাল দিচ্ছি। ওএমএস চলছে, আগামী মাস থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হবে। সুতরাং চালের দাম স্থিতিশীল থাকবে।