বিদেশে বসে বাংলাদেশ সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত প্রবাসীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, উসকানিমূলক ও সম্পূর্ণ বানোয়াট বক্তব্য প্রদানকারী এসব প্রবাসীকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন তথ্য জানানো হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
কমিটি এর আগের বৈঠকে দেশের বাইরে বসে দেশবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোর কর্মতৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার সুপারিশ করে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ওই সুপারিশের বাস্তবায়ন অগ্রগতির প্রতিবেদন দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী বা অভিবাসী বাংলাদেশি ব্যক্তিরা রেমিট্যান্স পাঠানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে অনেক সময় ভূমিকা রাখতে পারেন। দুঃখজনক হচ্ছে, ইতিবাচক ভূমিকা রাখার পাশাপাশি তাদের অনেকেই দেশের বাইরে অবস্থান করে বাংলাদেশ এবং সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত হন। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, উসকানিমূলক ও সম্পূর্ণ বানোয়াট বক্তব্য প্রদানকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির বা বিচারের মুখোমুখি করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার মোকাবিলা ও বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং অনলাইন মিডিয়াতে নিয়মিত তথ্যবহুল সংবাদ, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশের বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে নিয়মিত প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কমিটিকে জানানো হয়েছে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অসত্য ও অপপ্রচারমূলক সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল প্রতিবাদলিপি ওইসব গণমাধ্যমে প্রকাশের ব্যবস্থা করে থাকে বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, কমিটির আগের বৈঠকে বিদেশে বসে সরকারবিরোধী নানা প্রচারণার বিষয়টি নিয়ে কমিটির সদস্যরা আলোচনা করেছিলেন।
ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেছিলেন, ‘‘সরকার তথা দেশবিরোধী অপশক্তিগুলোর ক্রমাগত অপপ্রচারের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কতিপয় দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। এছাড়া সুইডেনের ‘নেত্র নিউজ’ মিথ্যা ও অর্ধসত্য তথ্য মিলিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। আগামী সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশবিরোধী একটি চক্র বিদেশে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।’’ এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারের বক্তব্যগুলো যথাযথভাবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেছিলেন।
মন্ত্রী ও কমিটির সদস্য এ. কে. আব্দুল মোমেন সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছিলেন, ‘ইউরোপের বেশ কিছু দেশে সরকার তথা দেশের বিরুদ্ধে একটি চক্র ব্যাপক আকারে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ এগুলো প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তিনি কমিটির পরামর্শ কামনা করেন।
হাবিবে মিল্লাত বলেছিলেন, ‘দেশবিরোধী চক্রটি দেশের বাইরে বসে বিভিন্ন ধরনের অসত্য তথ্য দিয়ে দেশের মধ্যে একটি অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেশবিরোধী চক্রের ২২ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দেশবিরোধী প্রচারণায় যেসব অসত্য তথ্য রয়েছে, তা তুলে ধরে সঠিক তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন প্রচারের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এ ব্যাপারে দল থেকেও একটি দিকনির্দেশনা থাকা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
সদস্য নাহিম রাজ্জাক সরকার তথা দেশবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রগুলো সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে হলে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি বেশি করে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেছিলেন, সুইডেন, ব্রাসেলসসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা বেশি হচ্ছে বিধায় এদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং কমিটির পক্ষ থেকে দেশগুলো সফর করার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এসব দেশে আগামী ৬ মাসের মধ্যে ভিজিট করতে হবে, না হলে পরে কমিটির সদস্যরা সময় দিতে পারবেন না।’ তিনি দেশবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রচারণার ক্ষেত্রে ‘ঢাকা ডায়লগ’ আয়োজনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান।