দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বেশ উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকলেও আবারও মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
ভোটের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে দুদলের মধ্যে চ্যালেঞ্জ-পালটা চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। সম্প্রতি সব ছাপিয়ে আবারও আলোচনায় চলে আসছে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা।
দলীয় সরকার নাকি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে-এ ইস্যুতেই আবারও দুদল ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’ অবস্থায় চলে যাচ্ছে কিনা-সেই প্রশ্ন ও আশঙ্কা সব মহলে।
শনিবার পৃথক দুই সভায় নির্দলীয় বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে তা আরও জোরদার হয়েছে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা-এ অবস্থা চলতে থাকলে সংঘাতময় পরিস্থিতি আসন্ন।
আরেকবার ২০১৪ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রও তৈরি হতে পারে। এর থেকে উত্তরণের পথ রাজনীতিকদের হাতেই রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন পারস্পরিক সমঝোতা। দল দুটি নিজেদের অনড় অবস্থান থেকে সরে এলেই এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।
বিশ্লেষকদের আরও অভিমত-সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনও এক্ষেত্রে উদ্যোগ নিতে পারে। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বারবার বিষয়টি রাজনীতিকদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবে না বলেও জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, দুদল ক্রমেই ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ চলে যাচ্ছে-এটা পরিষ্কার। এখন পর্যন্ত ভালো দিক হচ্ছে, উল্লেখযোগ্য সহিংস ঘটনা ঘটেনি। তবে সামনে এ ধরনের পরিস্থিতি যে আসবে না, তা বলা যাবে না। তিনি বলেন, নাগরিক হিসাবে আমার প্রত্যাশা, দুদলই কিছু ছাড় দিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছবে। যদিও এ প্রত্যাশা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খুবই কম। এর বড় উদাহরণ হচ্ছে, অতীতে জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথের উচ্চপদস্থ দুজন কর্মকর্তা বাংলাদেশে এসে দুদলের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেছিলেন। দুবারের ওই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছিল। এবারও রাজনীতিকরা যদি নিজেদের মধ্যে সমঝোতা না করেন তাহলে আমার আশঙ্কা হচ্ছে সামনে সংঘাতের দিকে যাচ্ছে দেশ। এতে একদিকে দেশে অস্থিরতা তৈরি হবে, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে আরও নাভিশ্বাস হবে।
রাজনৈতিক সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করতে পারেন রাজনীতিকরা। নির্বাচনের জন্য অল্প সময় বাকি থাকলেও রাজনৈতিক সমঝোতা হলে তা আইনে রূপ দেওয়া কঠিন নয়। এমনকি রাজনীতিকরা রাজি হলে সংবিধানের ভেতরে থেকেই বা সংবিধান সংশোধন করেও সমঝোতার পথ বের করা সম্ভব। তবে দুদলের যে অবস্থান তাতে তারা সমঝোতার পথ খুঁজছেন বলে মনে হচ্ছে না।
সংবিধান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগামী বছরের শেষ অথবা ২০২৩ সালের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আসছে নির্বাচন কমিশন। ওই নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। রাজনৈতিক প্রবাহ বিশ্লেষণে দেখা যায়, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রাজনীতিতে পালটাপালটি বক্তব্য দীর্ঘদিন ধরেই দিয়ে আসছেন দুদলের নেতারা। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির মহাসমাবেশগুলোতে নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন দলটির নেতারা। অপরদিকে শনিবার ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর কখনও বাংলাদেশে আসবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই বিএনপি নির্বাচনে আসবে। আর বিএনপি না এলেও সংবিধান মোতাবেক যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দুদলই এ ইস্যুতে সামনের কর্মসূচি জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, এখন যে পরিস্থিতি তাতে মনে হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পয়েন্ট অব নো রিটার্ন পর্যায়ে আছে। দুদলই শক্তি প্রদর্শন করছে। জনমত গড়ার চেষ্টা করছে। তবে এ অবস্থা বেশিদিন থাকবে না। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। কারণ এ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাড়া দলটির আরও কোনো গতি নেই। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিএনপিই বিতর্কিত করেছে। দলটি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানাতে সংবিধান সংশোধন করেছিল। এখন তাদের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাওয়া মানায় না।