সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ১৯ নভেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে চলছে মাইকিং। পাশাপাশি চলছে প্রচারপত্র বিতরণ, মিছিল ও সভা। অপরদিকে নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে দক্ষিণ সুরমার পরাইরচকে ইজতেমার আয়োজন করায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, তারা সব বিষয়ে সতর্ক।
নগরীতে পথে পথে শোভা পাচ্ছে ব্যানার-ফেস্টুন। গণসমাবেশ সফল করতে পোস্টারও সাঁটানো হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে আগের বিভাগীয় সমাবেশগুলো তেমন ‘সুখকর’ না হওয়ায় আতঙ্ক আছে নেতাকর্মীর মধ্যে। অনেকে গ্রেপ্তারের ভয়ে রাতে বাসায় থাকছেন না বলে জানা গেছে। দলের নেতাকর্মীরা জানান, নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বিভাগে গণসমাবেশ সফল হয়েছে। সিলেটের সমাবেশের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই প্রতিদিন নেতাকর্মীরা মিটিং, সভা, প্রচার মিছিলে অংশ নিচ্ছেন। নগর থেকে গ্রাম সবখানেই চলছে প্রচার কার্যক্রম। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা দফায় দফায় বৈঠক, সভা-সমাবেশ করেছেন। জেলা ও উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ছুটে যাচ্ছেন নেতারা।
জেলা, উপজেলা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতাকর্মীর থাকার জন্য বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার বুকিং করা হয়েছে। সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ-সংলগ্ন হোটেলগুলোও বুকিং হয়েছে বলে সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে। ওই এলাকার অধিকাংশ হোটেল বিএনপি নেতাদের মালিকানাধীন হওয়ায় অনেক আগে থেকেই এসব বুকিং হয়েছে বলে তাঁরা জানান।
সমাবেশস্থলের কাছে বিএনপির এক নেতার হোটেল থেকে মঞ্চের কাজ তদারকি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একজন। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, নেতারা রাতভর ওই হোটেলে অবস্থান করে মঞ্চ দেখাশোনা করছেন।
এদিকে ১৭ এবং ১৮ নভেম্বর ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে ৭৭ বছরপূর্তি উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমার পরাইরচক সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালে বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর শুরু হবে ইজতেমা। পর দিন শুক্রবার বাদ জুমা সংগঠনের আমির মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভীর মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ইজতেমা শেষ হবে।
ইজতেমা ও সমাবেশ কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় এটি নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। তবে ইজতেমার পর দিন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি যেন না হয় সেদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ সতর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (অতিরিক্ত দায়িত্ব- মিডিয়া) সুদ্বীপ দাস বলেন, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সব কর্মসূচি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা শাব্বীর আহমদ বলেন, ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে বহিরাগত কেউ থাকার সুযোগ নেই। তাছাড়া ইজতেমায় যাঁরা গাড়িবহর নিয়ে আসবেন তাঁরা নির্দিষ্ট ব্যানার ব্যবহার করবেন এবং প্রত্যেকটি গাড়িতে কোড বা সিরিয়াল নম্বর দেওয়া থাকবে।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘আশা করছি অন্যান্য জায়গার মতো সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে না। কারণ সিলেটে রাজনৈতিক সম্প্র্রীতি এখনও বজায় আছে। তারা তাদের অরাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবে, আমরা আমাদেরটা।’
এদিকে রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্র্র থেকে ফিরে সরাসরি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ছুটে আসেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, তাঁর বাসায় এখন পর্যন্ত পুলিশ যায়নি। তবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে তাঁরা বাসা-বাড়িতে থাকছেন না।
মৌলভীবাজারে ৩০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা :মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা এলাকায় লিফলেট বিতরণের সময় জেলা ছাত্রদল সভাপতিসহ পাঁচ নেতাকর্মীকে গত রোববার আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে ১২ বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে আটকদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান দিয়েছে মডেল থানা পুলিশ। এদিকে সোমবার দুপুরে জেলা ছাত্রদল তাঁদের মুক্তির দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।