সোমবার , ২৭ মার্চ ২০২৩ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. London Mirror Specials
  2. অন্যান্য
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জেলার খবর
  9. ঢাকা
  10. তথ্য-প্রযুক্তি
  11. প্রবাসের কথা
  12. বরিশাল
  13. বাংলাদেশ
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

রাহুল গান্ধীর দণ্ড ভারতের গণতন্ত্র কোন পথে

প্রতিবেদক
Newsdesk
মার্চ ২৭, ২০২৩ ১২:০৯ অপরাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২১ সালে জাতিসংঘে ভাষণে বলেছিলেন, ভারত ‘গণতন্ত্রের জননী’। তাঁর এ দাবির মধ্যে অসারতা থাকলেও এই সেদিনও বিশ্ববাসী গর্ব করতেন, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ভারতের গণতন্ত্র ছিল আদর্শস্থানীয়।

তবে এখন সারাবিশ্ব, এমনকি মোদির অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীও বুক চাপড়ান, হিন্দু জাতীয়তাবাদী এই নেতার শাসনে ভারতের সেই গর্ব দ্রুত অপস্রিয়মাণ। সর্বশেষ, দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধীকে রাজনৈতিক বক্তৃতার জন্য আদালতে দণ্ড দেওয়া এবং তড়িঘড়ি করে তাঁকে সংসদ ও নির্বাচনে অযোগ্য করায় সমালোচকদের সেই কথাই শক্ত ভিত্তি পেয়েছে।

২০১৪ সালে মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতের গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য দুর্বল হতে থাকে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের তুষ্ট করার রাজনীতি দিয়ে মোদি অনন্য জনপ্রিয়তায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম ও নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করেন। এই ধারা দিন দিনই শক্তিশালী হচ্ছে।

সে যাই হোক, প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনার জন্য দেশটির কার্যত প্রধান বিরোধী দলের নেতাকে কারাদণ্ড দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে– এমনটা ছিল অচিন্তনীয়। সেটাই এখন নির্মম বাস্তবতা। উচ্চ আদালত রাহুলের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালত ও সংসদের সিদ্ধান্ত স্থগিত কিংবা পাল্টে না দিলে আগামী বছর সাধারণ নির্বাচনের সময় প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা জেলে থাকবেন। এটা সত্যিকার কোনো গণতন্ত্রে দেখা যায় না। ভারতের ডেকান হেরাল্ড পত্রিকার এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, এটা শুধু কর্তৃত্ববাদী দেশেই ঘটে।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, এটা পরিতাপের বিষয়, দেশের অন্যতম আলোচিত রাজনীতিবিদ রাহুল গান্ধী বহুদিন ধরে মানহানির শিকার হয়েছেন। বহু বছর ধরে তাঁকে পাপ্পু, মিরজাফর, দেশদ্রোহী, দেশবিরোধীসহ নানা নামে ডাকা হয়েছে। এসব অভিযোগ করে তাঁকে ধাওয়া আর হয়রানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, অনেকে গুরুতর অপরাধ করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।

নিবন্ধে বলা হয়, রাজনৈতিক নেতা ও তথাকথিত (উগ্র হিন্দুত্ববাদী) ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা (মুসলিমদের) গণহত্যার ডাক দিলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরিবর্তে, যাঁরা সরকারের সমালোচনা ও বিরোধিতা এবং দ্বিমত পোষণ করেন, তাঁদের বিভিন্ন আইনে আটক করা হয়। দেশের সবচেয়ে কড়া আইন তাঁদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। দূরবর্তী রাজ্যে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং সমালোচকদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগে যায়। বিরোধীদের ভয় দেখানো এবং কণ্ঠরোধ করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাহুলের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মানহানির রায় এবং সংসদে অযোগ্য ঘোষণাকে বিজেপি রাহুলের ওপর রাজনৈতিক আক্রমণ বাড়ানোর জন্য আরও একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। কারণ তিনি সরকার, বিজেপি এবং মোদির সবচেয়ে কঠোর সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি এখন সরকারের ১ নম্বর টার্গেট।

নিবন্ধে বলা হয়, ‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত তাঁকে জেলে রাখা বা তাঁর সাজাকে ব্যবহার করার একাধিক লক্ষ্য থাকতে পারে বিজেপি সরকারের। বর্তমান পরিস্থিতিতে আদালত থেকে অব্যাহতি না পেলে তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। কল্পনা করুন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিরোধীদলীয় নেতাকে কারাগারে রেখে নির্বাচন হচ্ছে। একটি নির্বাচনী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে একটি মন্তব্যের জন্য তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এমন ঘটনা শুধু কর্তৃত্ববাদী দেশেই ঘটে। আমরা কি (ভ্লাদিমির) পুতিনের রাশিয়া বা কোনো ব্যানানা প্রজাতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পাঠ নিচ্ছি?’

রাহুল রাজনৈতিক বক্তৃতার জন্য দণ্ডিত হলেও মোদি কিন্তু রক্ষা পেয়েছেন। ভারতের ভিন্ন ধারার গণমাধ্যম দ্য ওয়্যারে ভাইভস অব ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক দীপল ত্রিবেদী লিখেছেন, মোদি মুসলিমদের পাশাপাশি কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি সোনিয়া গান্ধী ও তাঁর ছেলে রাহুলকে তীর বিদ্ধ করেছিলেন।

২০০২ সালের গৌরব যাত্রায় তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, ‘দেশের উন্নয়ন হবে কীভাবে? তুম পাঁচ, তুমহারে পাচ্চি।’ স্পষ্টভাবে মুসলমানদের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি এ কথা বলেছিলেন, তাত্ত্বিকভাবে যাদের চারটি পর্যন্ত বিয়ে করার অনুমতি রয়েছে। বিজেপি সরকার পরে মুসলিমদের বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করেছে। আর নিজ রাজ্য গুজরাটে তিনি সোনিয়া গান্ধীকে সোনিয়াবেন একটি জার্সি গাভি এবং রাহুলকে হাইব্রিড বাছুর বলে মন্তব্য করেছিলেন। অর্থাৎ মোদি বলেছেন, সোনিয়া একজন বিদেশি, শুধু একটি বোবা গাভি এবং তিনি একজন ভারতীয়কে বিয়ে করার কারণে রাহুল একটি সংকর বাছুর। তিনি তখন আরও বলেন, ২০ জনকে জিজ্ঞাসা করেন। কেউ সোনিয়াবেনকে এমনকি কেরানি এবং রাহুলকে পিয়নও বানাতে চান না।

রাহুল রাজনৈতিক বক্তৃতার জন্য অপরাধী সাব্যস্ত হলেও মোদির দলের লোকেরা কিন্তু মুসলিমদের গণহত্যার হুমকি দিলেও কিছু হয় না। অন্যদিকে, রাজনৈতিক স্বার্থে দণ্ডিত দুর্নীতিবাজকেও মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসাতে আইন সংশোধন করেছে বিজেপি সরকার।

ওয়্যারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিকিমের রাজনীতিক প্রেম সিং তামাং গোলেকে ২০১৬ সালে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ছয় বছরের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। সিকিম হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। কিন্তু মোদি সরকার জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের একটি মূল ধারা বাতিল করে বিজেপির এই মিত্রকে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ করে দেয়। মোদির ওই সংশোধনীর অর্থ, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধকে আর ‘গুরুতর’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।

প্রধানমন্ত্রীর যে কোনো ধরনের সমালোচনার জন্য ভারতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে এবং ভিন্নমত দমন করার জন্য আইন ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রীর পরাজয়ের আহ্বান জানিয়ে দিল্লিতে কয়েকটি পোস্টার লাগানোর কারণে মাত্র কয়েক দিন আগে কয়েক ডজন এফআইআর দায়ের এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনাকে সামগ্রিকভাবে ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবে দেখানো হয়।

দেশটির প্রভাবশালী দ্য হিন্দুর এক নিবন্ধে বলা হয়, ভারতে প্রায়ই রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি এবং ঘৃণা উদ্রেককারী বক্তৃতা নিয়ে উদ্বেগ দেখানো হয় না। সেখানে এটি হাস্যকর, একজন বিশিষ্ট নেতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হবে একটি মানহানিকর বক্তব্যের জন্য। এতে আরও বলা হয়, আধুনিক গণতন্ত্রে মানহানিকে কোনোভাবেই ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। ব্রিটিশ আমলে কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করাকে একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সমসাময়িক কালে প্রধানত সরকারি কর্মচারীদের সমালোচনা বন্ধ করার একটি হাতিয়ার হিসেবে মানহানি মামলাকে ব্যবহার করা হয়। বিরোধী দলগুলোর উচিত, ক্ষমতায় গেলে মানহানির আইন বাতিল করার ঘোষণা দেওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ভক্সের এক নিবন্ধে বলা হয়, রাহুলের সাজা ভারতে একটি নতুন সংকটের জন্ম দিয়েছে। লোকসভা থেকে তাঁর বহিষ্কার ভারতীয় গণতন্ত্রের পতনের সর্বশেষ লক্ষণ। বছরের পর বছর ধরে মোদি তাঁর দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আক্রমণ করেছেন। তাঁর সরকার মুসলিম সংখ্যালঘুদের অধিকার পদদলিত করেছে, সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের জেলে দিয়েছে এবং মুক্ত সংবাদমাধ্যমে লাগাম পরিয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভি-ডেমের ২০২১ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত গণতন্ত্র হিসেবে যোগ্যতা অর্জনের জন্য ন্যূনতম মানও পূরণ করেনি। তারা ভারতকে নির্বাচনী স্বৈরাচারী দেশে নামিয়ে দিয়েছে। ভারতের গণতন্ত্রের পতনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং মানহানি আইনের ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছে ভি-ডেম।

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক