নগরপিতা বেছে নিতে আজ বুধবার (২১ জুন) ভোটযুদ্ধে নেমেছেন সিলেট ও রাজশাহী সিটির ভোটাররা। সিলেট ও রাজশাহী দুই সিটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট নেওয়া হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। ভোটারদের সুবিধার জন্য আজ এই দুই সিটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানায়, নির্বাচনী এলাকায় সীমিত আকারে যান চলাচল করবে। সিসিটিভির মাধ্যমে ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে দুই সিটির ভোট সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে ইসি।
এর আগে গত ২৫ মে গাজীপুর এবং গত ১২ জুন বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এবারের এই সিটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত প্রায় ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ চারটি দল অংশ নেয়। দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করেছে।
অংশ নেওয়া চারটি দলের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গত ১২ জুন বরিশালে তাদের প্রার্থীর ওপর হামলার কারণে আজকের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পার হয়ে যাওয়ায় দুই সিটিতেই ব্যালটে তাদের প্রতীক বহাল থাকছে। অংশ নেওয়া অন্য দুটি দল হচ্ছে জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টি।
সিলেটে শেষ মুহূর্তে আরিফুলের ভোট ব্যাংক নিয়ে হিসাব-নিকাশ
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার আটজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। কিন্তু বরিশালে নিজেদের মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হাসান নির্বাচন বয়কট করেন। ফলে সাত প্রার্থী রয়েছেন মেয়র হওয়ার লড়াইয়ে।
যদিও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল ও ইসলামী আন্দোলনের মাহমুদুল হাসান ছাড়া বাকিরা তেমন আলোচনায় আসতে পারেননি। তাঁরা হচ্ছেন—জাকের পার্টির মো. জহুরুল আলম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল হানিফ কুটু, মো. ছালাউদ্দিন রিমন, মো. শাহজাহান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।
আলোচিত তিনজনের মধ্যে মাহমুদুল হাসান সরে দাঁড়ানোর কারণে এখন আনোয়ারুজ্জামান ও বাবুলের মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান কতটা হয় তা জানার অপেক্ষায় নগরবাসী। শুরুতে বাবুল আলোচনায় না থাকলেও শেষ দিকে তাঁকে নিয়ে আলোচনা চলছে। এখন আর বাবুলকে হালকা করে দেখার অবস্থা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধীদের ভোটের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।
নাম প্রকাশ না করে মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, ‘বিএনপি নেতা ও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দলের সিদ্ধান্তে এবার প্রার্থী না হওয়ায় আমাদের প্রার্থীর সুবিধা হয়েছে। দলীয় কাউন্সিলরদের আটকে রেখে বিএনপি তা আরো সহজ করে দিয়েছিল। কিন্তু সিলেট ও রাজশাহীতে আজ ভোটবহিষ্কারের পরও তাদের প্রায় ৪২-৪৩ জন কাউন্সিলর মাঠে রয়ে গেছেন। তাঁদের ভোটারের বড় অংশই তো বিএনপিপন্থী। এ বিষয়টি যথেষ্ট দুশ্চিন্তার। বিশেষ করে সিটি করপোরেশনে নতুন যে ১৫টি ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে কারো পরিষ্কার ধারণা নেই। এসব ওয়ার্ডে বিএনপির একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। তা ছাড়া ভোটকেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামীসহ আওয়ামী লীগবিরোধী ভোটারদের উপস্থিতি কেমন হবে সেটাও ভাবনার বিষয়। সব মিলিয়ে মেয়র পদে এ নির্বাচন যতটা সহজ মনে হয়েছিল ততটা হবে বলে মনে হয় না।’
আওয়ামী লীগ ছাড়াও স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও মনে করেন, আরিফুল হকের দলীয় ভোটের বাইরেও বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। সেই সব ভোট নৌকায় যাওয়ার সম্ভাবনা কম।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা তো আশাবাদী। ভোটারদের ভোটের ওপর বিশ্বাসীও। বিএনপির কাউন্সিলররা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নেবেন তাঁদের প্রয়োজনে। তবে যদি সেই ভোটারদের মনে হয় আমাদের প্রার্থীকে ভোট দেবেন, তাহলে সেটা আমাদের জন্য ভালো। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।’
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘বিএনপির কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। কিন্তু সমর্থকদের তো আটকে রাখার চিন্তা করা যায় না। বিশেষ করে দল থেকে যাঁরা বহিষ্কৃত হয়েছেন সেসব কাউন্সিলর প্রার্থী তাঁদের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাবেন, সেটাই স্বাভাবিক।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটে ভয় আছে। এখানে একসময় ছক্কা সইফুর পাস করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন শামীমের মতো বাঘা রাজনীতিবিদকে হারিয়ে। তবে যদি আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে তাদের জন্য ভালো ফল আসবে। না থাকলে কঠিন হবে।’
জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল গতকাল এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘প্রশাসন এক পক্ষের হয়ে কাজ করছে। আমাদের দুর্বল পেয়ে তারা এমন করছে। তবে আমি বলতে চাই, লাঙলের যে জোয়ার উঠেছে, যতই ষড়যন্ত্র করুক, ওই জোয়ার থামাতে পারবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ২১ তারিখের নির্বাচনে লাঙল লাখ ভোটের ব্যবধানে জিতবে।’