বিচারপতিদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থেকে মুক্ত থেকে বিবেকের প্রতি অনুগত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বৃহস্পতিবার বিচারিক কর্মজীবনের শেষ দিন বিদায় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
৬৭ বছর বয়স পূর্ণ করে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অবসরে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। সে সময় সুপ্রিম কোর্ট অবকাশে থাকবে বলে বৃহস্পতিবারই তার বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবস।
রেওয়াজ অনুসারে এদিন তাকে আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচার কক্ষে বিদায় সংবর্ধনা দেয় অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
বিদায়ী ভাষণে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বিচারপতিদের উদ্দেশে বলেন, রাজনৈতিকভাবে বয়ে যাওয়া হাওয়া থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে, সংবিধান, আইন নিজেদের বিচারিক বিবেকের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে বিচার কার্য সমাধান করতে হবে।
বিদায়ী বক্তব্যে তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক বিভক্তি বিচারলয়ে আসলে তা মঙ্গলজনক নয়।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বিচার বিভাগ প্রজাতন্ত্রের হৃদপিণ্ড। রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের দক্ষতার চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আর কোনো উপযুক্ত পরীক্ষা নেই। একটি জাতির জনগণ শাসন বিভাগ বা আইন বিভাগের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারালে সে জাতিকে খারাপ দিনটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বা প্রাধান্য কার্যকর করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। বিচার বিভাগ যদি আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ বা পিছপা হয় তাহলে রাষ্ট্র এবং নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য।
বিচারালয়ে আইনজীবীদের বিভক্তি ও মতভেদ আইনের শাসনের পথকে রুদ্ধ করে বলে সতর্ক করেন তিনি।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ রাজনৈতিকভাবে বাস্তবায়ন করলে এবং বিচারালয়কে নিরাপদ দূরত্বে রাখলে বিচার বিভাগ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। রাজনৈতিক বিভক্তি রাজপথ অতিক্রম করে বিচারালয় অভিমুখে ধাবিত হলে সেটা বিচারলয়ের জন্য মঙ্গলজনক হয় না। আমাদের মনে রাখতে হবে, আইনজীবীদের বিভক্তি ও মতভেদ এবং তার প্রতিক্রিয়া বিচারালয়কে ক্ষতিগ্রস্থ করে। রাজনৈতিক মতাদর্শ রাজনৈতিকভাবে বাস্তবায়ন করলে এবং বিচারলয়কে নিরাপদ দুরত্বে রাখলে বিচার বিভাগ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যে মহান চিন্তা ও কল্যাণ চেতনাকে সন্নিবেশিত করে আমাদের সংবিধান প্রণীত হয়েছে, তার ধারক ও বাহক হিসেবে, দেশের সকল আইন ও সকল আইনগত কার্যক্রম সাংবিধানিক চেতনার প্রতিফলন নিশ্চিত করার সুমহান জাতীয় দায়িত্ব আমাদের সবার।’