তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা লড়াই করেছি, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটানোর জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জন্যই লড়াই করে যাচ্ছি। এই সরকার স্বাধীনতার যে অর্জন, সব নষ্ট ও ধ্বংস করে ফেলেছে।
তারা এ দেশের আত্মাকে নষ্ট করেছে।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৬তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে উত্তরবঙ্গ ও বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার একটি লক্ষ্য নিয়েছে। যারা বিরুদ্ধে কথা বলবে, আন্দোলন করবে, তাদের জেলে ঢুকিয়ে গ্রেপ্তার করে সরকার স্তব্ধ করতে করতে চায়। কিন্তু এগুলো করে জনগণের আন্দোলন থামাতে পারবে না। এ আন্দোলনে জয়ী হতে হবে, আন্দোলন করে এদের পতন ঘটানো ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।
তিনি বলেন, কথা বেশি নয়, কথা একটিই। এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এবার আমাদেরকে জয়ী হতেই হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারেক কে? তিনি হলেন, আধুনিক রাষ্ট্রের রূপকার জিয়াউর রহমান এবং এ দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বড় সন্তান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায় আওয়ামী লীগ। এবার আর ওয়াক ওভার পাবে না আওয়ামী লীগ। এ দেশের জনগণ আর হতে দেবে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আসুন আমরা পণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই, এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কবিরা লিখছেন, সকল দেশের রানী আমার জন্মভূমি, কিন্তু এখন দেশে কেউ থাকতে পারে না, চায় না। কারণ যে দেশে রাজত্ব করে পাপীরা, সে দেশে আর ভালো মানুষ থাকতে পারে না। এমনি এক অবস্থা যাচ্ছে দেশে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন কোর্টের লোহার শিকলে গিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে। পুলিশ তাদের বাহিনী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। বিচারকরা অতি দ্রুত আমাদের সাজা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, যাতে আমাদের জেলে ঢুকিয়ে আগের মতো নির্বাচন করা যায়। এজন্য আমাদের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সবাই এখন এমপি আর মন্ত্রী হতে চায়, কিন্তু দেশটা বাঁচাতে চায় কয়জন? স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এত নেতা ছিল না আমাদের। কিন্তু আমরা তখন বিজয়ী হতে পেরেছিলাম। এখন তো নেতা বেশি, কেউ কাজ করে না, ছাত্রদের তো আন্দোলনে দেখি না।
তিনি বলেন, চেষ্টা করলেও শেখ হাসিনা এককভাবে নির্বাচন করতে পারবেন না, এটি আমি বলে গেলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজ প্রমাণিত হয়েছে, কেন সেদিন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদের টার্গেট হয়েছিলেন। তা আজ প্রমাণিত। তখন তারেক রহমান শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্রকারীদের চক্ষুশূল হয়েছিলেন। এ জন্য তার ওপর জুলুম-নির্যাতন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরই তারেক রহমান, এই কারণেই তার ওপর এতো নির্যাতন। এখনও সে ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি, চালু আছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখনও খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বেঁচে আছেন। কীভাবে তাদের নিশ্চিহ্ন করা যায়, সব চেষ্টাই শেখ হাসিনা করে যাচ্ছেন। কারণ শেখ হাসিনাকে দিয়ে বিদেশিরা যে স্বার্থ নিতে পারবে, কিন্তু খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দিয়ে তো এমন স্বার্থ হাসিল করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, আমি কখনো দেখিনি বিচারপতিরা এত আগ্রহ নিয়ে বিচারকাজ করছেন, যাতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সাজা অতি দ্রুত সম্পূর্ণ করা যায়। আমাদের রেগুলার কোর্টে যেতে হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তা বিচারকদের কক্ষে গিয়ে মুখস্থ করে এসে মোবাইল দেখে এজলাসে সাক্ষী দিয়ে যাচ্ছে। এটা কারো শোনা নয়, নিজের চোখে দেখা।
রিজভী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পাতানো নির্বাচনে যারা সহযোগিতা ও কাজ করে যাবেন, তারা এই দেশের জনগণের কাছে কালো তালিকাভুক্ত হবেন। জানেন, শেখ হাসিনার ভয় কীসে? জনগণে। আর আমাদের ভরসা জনগণ আর গণমাধ্যমে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে অঙ্গীকার করব, আমাদের বিজয় না আসা পর্যন্ত আমরা আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে যাব না।