পাইলট প্রকল্পের আওতায় শিগগিরই কিছু রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। প্রথম ব্যাচে দেশটি ভেরিফায়েড তিন হাজার রোহিঙ্গাকে দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) নেপিডোতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মহাপরিচালক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে থাকা দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দায়িত্বশীল এ কূটনীতিক জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো আলোচনা হয়েছে। তারা যত শিগগিরই সম্ভব প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। আমরা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই। আলোচনা হয়েছে, ভেরিফায়েড তিন হাজার রোহিঙ্গা দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। প্রথম ব্যাচে টার্গেট; এটা যত দ্রুত সম্ভব হতে পারে। নির্দিষ্ট করে এটা বলা যাচ্ছে না, এটা কতদিনের মধ্যে হতে পারে এরপর পরবর্তী ব্যাচে ৫ হাজার বা তার পরের ব্যাচে ৭ হাজার করে হতে পারে। এ সংখ্যাগুলোই যে হবে, সেটা এখনো নিশ্চিত করে বলা ঠিক হবে না।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর আগে রোহিঙ্গাদের মনোবল বাড়াতে হবে বলে জানান এ কূটনীতিক। তিনি বলেন, যাদের প্রত্যাবাসন করা হবে তাদের আগে কনফিডেন্স বিল্ডিং বাড়াতে হবে। তারপর তাদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় যেতে চায় তাদের পাঠানো হবে। আমরা টেকসই প্রত্যাবাসন করতে চাই, যেন প্রথম ব্যাচের পর পরবর্তী ব্যাচ যেতে থাকে।
মিয়ানমার থেকে একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজার এসে রোহিঙ্গাদের মনোবল বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করার কথা রয়েছে। মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের কক্সবাজার সফরের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে এ কূটনীতিক বলেন, তারা আসবে। আমরা চাই, তারা এসে রোহিঙ্গাদের আগ্রহী করে তুলুক; তাদের নিশ্চয়তা দিক। প্রত্যাবাসনের আগে আমাদের মুল টার্গেট রোহিঙ্গাদের কনফিডেন্স বিল্ড করা।
অতীত অভিজ্ঞতায় দুবার প্রত্যাবাসনের খুব কাছে গিয়েও একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে না পাঠাতে পারার কথা স্মরণ করিয়ে দেন এ কূটনীতিক।
বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে নেপিডোর প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির মহাপরিচালক পলিটিক্যাল এইউএনজিকে।
চীনের ভূমিকায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সে উদ্যোগটি ব্যর্থ হয়।
পরবর্তী সময়ে চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালের আগস্টে দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসন উদ্যোগও ব্যর্থ হয়। ওইসময় রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা জানায় রোহিঙ্গারা। ফিরে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে তারা। সাত বছরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
চলতি বছর নতুন করে আবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে বেশ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছে চীন। তারই অংশ হিসেবে এপ্রিলের মাঝামাঝিতে কুনমিংয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে বৈঠক করেছে চীন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় রোহিঙ্গাদের একটি দল নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রাখাইন সফর করবেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৫ মে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা রাখাইন সফর করেন। ফিরতি সফরে রোহিঙ্গাদের মনোবল বৃদ্ধিতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সাইক্লোন মোখার কারণে সেটি পিছিয়ে দেয় মিয়ানমার। পরবর্তীতে গত ২৫ মে ১৪ সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজার ঘুরে যান।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল চার লাখের অধিক রোহিঙ্গা। এছাড়া প্রতি বছর নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে।