সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে শুরু হচ্ছে বিএনপির ভিন্নমাত্রার আন্দোলন। লক্ষ্য দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো।
এর অংশ হিসাবে কাল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি পৃথকভাবে গণমিছিল করবে। দুই স্থান থেকে এ গণমিছিল শুরু করলেও নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একই সময়ে মিলিত হবে। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে তা শেষ করবে। যুগপৎ এ কর্মসূচি সমমনা দল ও জোটও পৃথকভাবে পালন করবে।
এদিকে গণমিছিলকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। সফল করতে কয়েক দফা প্রস্তুতি সভা করেছে। উত্তর ও দক্ষিণের কেন্দ্রীয়সহ সব থানা-ওয়ার্ডের নেতাকর্মী-সমর্থকদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অংশ নিতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
দলটির নেতারা জানান, এখন থেকে সব কর্মসূচিতেই ভিন্নতা থাকবে। ধীরে ধীরে আন্দোলনের গতি বাড়বে। মধ্য সেপ্টেম্বরের পর থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আন্দোলনের রূপরেখা সাজানো হচ্ছে। আগে মহানগর উত্তর-দক্ষিণ গণমিছিল, পদযাত্রার মতো কর্মসূচি শেষে একসঙ্গে মিলিত হয়নি। এবার গণমিছিলও হবে, একই সঙ্গে সমাবেশও হবে। এতে করে নেতাকর্মীরা আরও উজ্জীবিত হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের দুটি গণমিছিলই বেলা ৩টায় শুরু হবে। উত্তরের গণমিছিলটি রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হয়ে আবুল হোটেল-মালিবাগ রেলগেট-মৌচাক-মালিবাগ মোড়-শান্তিনগর-কাকরাইল মোড়-নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হবে।
অন্যদিকে দক্ষিণ বিএনপির গণমিছিল কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে পীরজঙ্গি মাজার-আরামবাগ-ফকিরাপুল মোড় হয়ে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হবে। পরে সেখানে সমাবেশ করবে দলটি। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেবেন। সমাবেশ থেকে আবারও কর্মসূচি দেওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিরোধী সব রাজনৈতিক দলসহ দেশের জনগণ রাস্তায় নেমেছে। সবাই নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। দাবি আদায়ে বিএনপি অতীতের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে। গণমিছিলে জনতার ঢল নামবে। প্রধানমন্ত্রীর বুকে কম্পন ধরানোর মতো কর্মসূচি আসবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, ‘কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে। অতীতের যে কোনো কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ প্রমাণ করে আমরা সফল হবই। গণমিছিল কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও উন্মুখ হয়ে আছে। আশা করছি, বিপুল লোকসমাগম হবে। উত্তর ও দক্ষিণের দুটি গণমিছিল নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হবে। সেখানে দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেবেন।’
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, এরপর আদালতকেন্দ্রিক যুগপৎ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিচার বিভাগ বা আদালতকেন্দ্রিক কিছু কর্মসূচি দেওয়া হবে, যাতে দেশের বিচার বিভাগ নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ সব মহলের নজরে আসে। নেতাদের অভিযোগ, বিশেষ করে তড়িঘড়ি করে বিএনপির নেতাদের সাজা, গায়েবি মামলা, আদালতে ঘনঘন হাজিরার তারিখ নির্ধারণ-এসব নির্বাচনকে সামনে রেখেই করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে আইনজীবীদের সক্রিয় করে তাদের মাধ্যমেই কর্মসূচি গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর লক্ষ্য, আদালত অঙ্গনে আইনজীবীদের সক্রিয় করা, সেই সঙ্গে কর্মসূচি দিয়ে ‘আদালত-পরিস্থিতি’ সব মহলের নজরে আনা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘সরকার গায়ের জোরে ১৫ বছর ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে। প্রশাসনসহ সব রাষ্ট্রযন্ত্রকে আজ দলীয় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। জনগণ এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারকে সরে যেতে হবে। শনিবার থেকে সরকার পতনের যে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হচ্ছে, তাতে আর বিরতি থাকবে না। সরকার পতনের মাধ্যমেই এই আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে।’
যুগপৎ আন্দোলনের এ কর্মসূচি একইদিন পালন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), গণফোরামসহ (মন্টু) সমমনা দল ও জোট।
গত ১২ জুলাই একদফা আন্দোলনের ঘোষণার পর এ পর্যন্ত বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো ঢাকায় পদযাত্রা, মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান, গণমিছিল ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ ২৪ ও ২৫ আগস্ট ঢাকাসহ সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ছিল।