ভারতের সাথে পূর্ব ঘোষিত একটি ‘বাণিজ্য মিশন’ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা সরকার।
চলতি বছরের অক্টোবরে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও শুক্রবার তা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন কানাডীয় বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যারি নাগের মুখপাত্র শান্তি কসেন্টিনো। খবর এনডিটিভি ও আল জাজিরার।
শান্তি কসেন্টিনো বলেছেন, ‘এই সময়ে আমরা ভারতের সাথে আসন্ন বাণিজ্য মিশন স্থগিত করছি।’
এদিকে ভারতীয় কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান, কানাডার সাথে ভারতের চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের কারণে একটি বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে গেলো মে মাসে ম্যারি নাগ এবং ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়াল এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে।
কিন্তু দিল্লিতে সদ্য শেষ হওয়া জি-২০ সম্মেলনে কানাডায় খালিস্তানি সমর্থকদের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ এবং তাদের দ্বারা ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনগুলোতে আক্রমণের ঘটনায় কানাডা প্রশাসন ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সমালোচনা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
নাইজারে ফরাসি রাষ্ট্রদূত জান্তার হাতে জিম্মি: ম্যাক্রোঁনাইজারে ফরাসি রাষ্ট্রদূত জান্তার হাতে জিম্মি: ম্যাক্রোঁ
সম্প্রতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভারত সরকার কানাডায় ‘ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ’ অব্যাহত রাখার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এর পরপরই কানাডার পক্ষে থেকে এলো এ ঘোষণা।
ভারতের পাঞ্জাবের বাইরে সবচেয়ে বেশি শিখ জনগোষ্ঠী বসবাস করে কানাডায়। যাদের অনেকেই উত্তর ভারতে ‘খালিস্তান’ নামে একটি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র গঠনের জন্য আন্দোলন করছে। ভারত সরকার এ আন্দোলনের বিরোধিতা করে আসছে।
অন্যদিকে কানাডায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও শিখরা বেশ প্রভাবশালী। ট্রুডোর মন্ত্রিসভাতেও রয়েছেন শিখ মন্ত্রী। ২০১৭ সালে ভারতের পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ তোলেন, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছেন কানাডার মন্ত্রীরা। একই অভিযোগ মোদি সরকারের।
তবে কানাডা সরকার বলছে, দেশটিতে খালিস্তানি সমর্থকদের মত প্রকাশ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের স্বাধীনতা রয়েছে। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ায় দুই দেশ।
অর্থমূল্য বাড়ছে নোবেল পুরস্কারেরঅর্থমূল্য বাড়ছে নোবেল পুরস্কারের
‘খালিস্তান’ দক্ষিণ এশিয়ার পাঞ্জাব অঞ্চলে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত একটি স্বতন্ত্র ও সার্বভৌম দেশ। প্রস্তাবিত রাষ্ট্রকে ভূখণ্ডগতভাবে ভারতীয় পাঞ্জাব রাজ্য থেকে শুরু করে বৃহত্তর পাঞ্জাব অঞ্চল পর্যন্ত অথবা প্রতিবেশী ভারতীয় রাজ্যসমূহকেও অন্তর্ভুক্ত করে সংজ্ঞায়িত করা হয়। পাঞ্জাব অঞ্চল শিখদের ঐতিহ্যগত মাতৃভূমি। ইংরেজ দ্বারা অধিকৃত হওয়ার আগে পাঞ্জাব শিখদের দ্বারা ৮২ বছর শাসিত হয়; ১৭৬৭ থেকে ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত সমগ্র পাঞ্জাব শিখ মিসল (সার্বভৌম শিখ রাষ্ট্র) সমূহের অধীন ছিল, তারপর মহারাজা রণজিৎ সিং শিখ মৈত্রী সঙ্ঘকে শিখ সাম্রাজ্যের মাঝে একীভূত করেন।
সেখানে শিখদের পাশাপাশি অনেক হিন্দু ও মুসলিমও বসবাস করতো। ১৯৪৭ সালের আগে শিখরা ব্রিটিশ অখণ্ড পাঞ্জাব রাজ্যের শুধু লুধিয়ানা জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে মুসলিম লীগ যখন মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানায়, তখন কিছু শিখ নেতা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে, হিন্দু ও মুসলিমের ভিত্তিতে ভারত বিভাজিত করলে শিখ সম্প্রদায়ের কোনো স্বাধীন মাতৃভূমি থাকবে না। তারা তখন বৃহত্তর পাঞ্জাব অঞ্চলে বিস্তৃত খালিস্তান নামক একটি ধর্মরাষ্ট্র সৃষ্টির ধারণা পেশ করেন। তখন থেকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত।


















