আগামী বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে ভোটের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার কেরানীগঞ্জে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভোটের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন।’
বিদেশ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ফিরলেই ‘খেলা শুরু হয়ে যাবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্যাপ্টেন আসতেছেন। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন শেষে ক্যাপ্টেন এখন ওয়াশিংটনে আছেন। প্রস্তুত হয়ে যান, খেলা হবে। জোরদার খেলা হবে, লাল সবুজের পতাকা হাতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।’
মঙ্গলবার গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান জানান, আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর নির্বাচন হবে জানুয়ারির শুরুতে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এরপর কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হবে না দাবি করে সব নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। বিএনপি এখন সরকার পতনের এ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের দাবি সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নির্বাচন করতে হবে। অন্যদিকে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে আয়োজনে অনড় অবস্থানে আওয়ামী লীগ।
বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়রি। সে ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে পরের বছর জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে আগামী সংসদ নির্বাচন শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কেউ এখন শোনে না উল্লেখ করে সমাবশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একাত্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমাদের থামাতে পারেননি। আজও আমাদের থামাতে পারবে না। আমরা কারও নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করি না। আমরা পরোয়া করি আমাদের সংবিধানের। কোনো দেশের নিষেধাজ্ঞা আমরা মানি না, মানবো না।’
বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সমাবেশে যোগ দেন দলের নেতাকর্মীরা। টানা কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।
এর আগে সোমবার উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশ করে দলটির নেতাকর্মীরা। সমাবেশ থেকে, নাশকতা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বাদ দিতে বিএনপিকে ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম দেয় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বুধবার গাজীপুর মহানগরের সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া মিরপুরের কাফরুলেও আরেকটি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।
ওবায়দুর কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কারো বাড়িতে হামলা হলে পাল্টা আঘাত করা হব। বিএনপি ঢাকা দখল করবে? আমরা প্রস্তুত আছি, ঢাকা ছেয়ে যাবে লাল সবুজের পতাকায়।’
আজকে সারাবিশ্বে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে, এটা আমাদের দোষ না। যুদ্ধের কারণে হয়েছে। ধীরে ধীরে এই সংকট কেটে যাবেঃ কাদের
সমাবেশে সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘নির্বাচন আসলেই বিএনপি নির্বাচন থেকে পালিয়ে যাওয়ার পায়তারা করে। ভোটে জিতবে না জেনে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। জনগণের সাথে নিয়ে বিএনপি জামায়াতের নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করা হবে। শেখ হাসিনা জানেন কীভাবে করতে হয়। কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া হবে না।’
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ‘খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশ না পাঠালে দায় দায়িত্ব সব আওয়ামী লীগের’-বিএনপি নেতাদের এমন মন্তব্যের জবাবে বলেন, ‘কেন, দায় আওয়ামী লীগের কেন হবে? আপনারা যদি মনে করেন তার উন্নত চিকিৎসা দরকার তাহলে কেন আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছেন না। সকাল-বিকেল রাস্তায় বসে নাটক বন্ধ করেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আপনারা নাটকবাজি করছেন। যদি খালেদা জিয়ার কিছু হয় তাহলে এর দায়-দায়িত্ব বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বহন করতে হবে, অন্য কারও নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি-জামায়েতের লক্ষ্য নির্বাচন বন্ধ করা। তাদের জনসমর্থন নেই বলে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না। দেশের ৭০ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনার পক্ষে। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করায় বিএনপির উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। বাংলাদেশের মানুষ ভিসানীতির তোয়াক্কা করে না। ভিসানীতির আড়ালে কোনো ষড়যন্ত্র করতে চাইলে স্পষ্ট করুন। সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচন হবে।’
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলন কতপ্রকার ও কী কী আওয়ামী লীগ জানে। বিএনপি পালাবার পথ পাবে না। বাংলাদেশে পুতুল সরকার বসানোর পরিকল্পনা সফল হবে না। কে আসলো কে আসলো না, কে পর্যবেক্ষক পাঠালো কে পাঠালো না, তার পরোয়া করি না। যথাসময়ে নির্বাচন হবে।
বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় না, রাজনীতি করতে চায় বলেও মন্তব্য করেন কামরুল।