দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) বিবৃতি সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওএইচসিএইচআর হয়তো বিএনপির গুজব প্রচারের ফাঁদে পড়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাটির ওই প্রতিবেদন বস্তুনিষ্ঠ নয় বলেও মন্তব্য করেছে সরকার।
বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় দলটির কর্মীদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের সম্পৃক্ত থাকার কথা বলেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন।
গত শনিবারের পর থেকে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে মঙ্গলবার দেওয়া বিবৃতিতে এমন বক্তব্য দেয় সংস্থাটি।
ওই বিবৃতিতে সরকারকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানায় জাতিসংঘের এই সংস্থাটি।
এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকার বলেছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের এক দফা অসাংবিধানিক দাবির নামে বিএনপির সহিংসতায় সরকার মর্মাহত।
গত শনিবার বিএনপির ওই সমাবেশের প্রেক্ষাপট তাদের দেওয়া পুলিশের অনুমতির কথা তুলে ধরে সরকারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপি কর্মীরা নির্বিচারে সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ এবং ব্যক্তি ও সম্পদের ওপর হামলা করে। বিএনপির লক্ষ্য ছিলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, নিরপরাধ নাগরিক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সম্পত্তি।
পুলিশ হত্যা, বাসের আগুন দেওয়া, সাংবাদিকদের ওপর হামলাসহ বিএনপির নানা কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরে সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপির এমন ক্রমাগত নৃশংসতার মুখেও বাংলাদেশ সরকার এবং এর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত সংযম ও ধৈর্য্য প্রদর্শন করেছে এবং জনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সর্বনিম্ন ও সর্বোত্তম শক্তি প্রয়োগ করেছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা তাদের বিবৃবিতে বলেন, ‘মোটরসাইকেলে আসা মুখোশ পরা একদল ব্যক্তি যুক্ত ছিলেন, যারা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ এই কথা প্রত্যাখান করে সরকার বলেছে, ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিএনপির সমাবেশ থেকে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুর করা হয়েছে। মিডিয়া রিপোর্টে একজন ব্যক্তিকে প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরা এবং আইন প্রয়োগকারী এজেন্ট/প্রেস কর্মী হিসেবে নিজেকে জাহির করে এবং যানবাহনে আগুন লাগিয়ে যুবদলের ঢাকা দক্ষিণ শাখার সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নকে শনাক্ত করেছে। আহত সাংবাদিকরা দাবি করেননি যে তাদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা হামলা করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপির তৎপরতা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তারা সহিংসতা, বিশেষ করে অগ্নিসংযোগের উদ্দেশ্য নিয়ে জনসাধারণের উপদ্রব সৃষ্টি, জীবন-জীবিকা বিঘ্নিত করা, অর্থনীতি ব্যাহত করা, গণযোগাযোগ, পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত এবং দেশে সম্পূর্ণ নৈরাজ্য করতে চায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে এবং সহানুভূতি অর্জনের জন্য বিএনপি অসত্য তথ্যের আশ্রয় নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টাকাণ্ডের কথাও তুলে ধরা হয়।
সরকার বলেছে, বিএনপির উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামী নির্বাচন ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা। দুর্ভাগ্যবশত, ওএইচসিএইচআর বিএনপির গুজন প্রচারের ফাঁদে পড়ে থাকতে পারে।
মানবাধিকার হাই কমিশনারের কাজ অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ হতে বলে মন্তব্য করে সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রকাশের আগে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ের পদ্ধতি পর্যালোচনা করা দরকার।
সরকার আশা করে ওএইচসিএইচআর তাদের প্রেস ব্রিফিং নোটটি খাঁটি তথ্যের ভিত্তিতে সংশোধন করবে। না হলে প্রতিষ্ঠানটি জনগণের সমর্থন, গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।