বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সরব অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচন নিয়ে ওয়াশিংটন কী বলছে, তা এখন কূটনৈতিক অঙ্গন ছাড়িয়ে টং দোকানেও আলোচনা হচ্ছে। ওয়াশিংটন যে বার্তাই দিক সেগুলো ছাড়িয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের গতিবিধি আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকাল ১১টায় পরাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রবেশ করেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
প্রায় দেড় ঘণ্টা চলে বৈঠক। বৈঠক শেষে পদ্মা থেকে বের হন পিটার। কথা বলেননি গণমাধ্যমের সঙ্গে। পদ্মার বাইরে অপেক্ষমান কিছু গণমাধ্যমকর্মী আশা করছিলেন অন্তত পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক নিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু একই ভেন্যুতে অন্য প্রোগ্রাম থাকায় সচিবকে আর পায়নি গণমাধ্যম।
একই দিন বেলা আড়াইটায় শ্রীলঙ্কাকে মেডিকেল সামগ্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ছাড়াও পররাষ্ট্রসচিব উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের থেকে কোনো প্রশ্ন নেওয়া হয়নি। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন পররাষ্ট্রসচিব।
পরে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না পররাষ্ট্রসচিব। সাধারণত, প্রধানমন্ত্রীর সফরের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকেন পররাষ্ট্রসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা পররাষ্ট্রসচিব ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন করেন। তবে, কোনো উত্তর মেলেনি। ড. মোমেন বলেন, সেটা ওনাকে জিজ্ঞেস করেন। অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উনি (সচিব) মন্ত্রণালয়ে থাকেন। আপনারা চাইলেই তাকে পান।
পররাষ্ট্রসচিবের দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, অনেক শিডিউল পড়ে যাওয়ায় সংবাদ সম্মেলনে থাকতে পারেনি পররাষ্ট্রসচিব।
পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিব ও রাষ্ট্রদূতের বৈঠকে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বৈঠক হয়েছে স্বীকার করলেও আলোচনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে, কূটনৈতিক সূত্রগুলো এ বৈঠককে ‘রুদ্ধদ্বার বৈঠক’ বলেই মনে করছেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলোর ধারণা, বৈঠকে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২৮ অক্টোবরের সংঘাত-সহিংসতা এবং পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। হতে পারে, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে সংলাপের তাগিদ দিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ মীমাংসার বার্তা থাকতে পারে।
সূত্রগুলো আরও বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সংলাপের বার্তা দিলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ ধরনের বার্তা একেবারে নতুন। গত মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত শর্তহীন সংলাপের কথা বলেন।
বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সঙ্গে মুখ খুলছে না মার্কিন দূতাবাসও। বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে ‘কূটনৈতিক পন্থা’ অবলম্বন করেন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফিন ইবেলি।
তিনি বলেন, কূটনীতিক হিসেবে আমরা বিভিন্ন ধরনের সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে কথা বলি। সুশীল সমাজ ও বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যমকর্মী, ব্যবসায়িক নেতা, রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ অনেকের সঙ্গে আমাদের কথা হয়। এসব যোগাযোগ ও আলাপে বাংলাদেশকে আরও ভালোভাবে বুঝতে এবং আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করে।