দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা করেছে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই, যেখানে সাম্প্রতিক সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার এফবিসিসিআইয়ের গুলশান কার্যালয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সংগঠনের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিগত কয়েক বছর যাবৎ দেশে অত্যন্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে যা ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত জরুরি।
‘কিন্তু সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস কর্মকাণ্ডের ফলে দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ছে। একইসঙ্গে তৈরি পোশাক খাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।’
গত ২৮ অক্টোবর সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় জড়ায় বিএনপি ও জামায়াত। সেদিন অসংখ্য গাড়িতে আগুন দেয়া হয়, পুড়িয়ে দেয়া হয় হাসপাতাল। পিটিয়ে হত্যা করা হয় পুলিশ সদস্যকে।
এরপর থেকে হরতাল ও অবরোধের নামে চলছে সহিংসতা। সারাদেশের চলছে আগুন সন্ত্রাস।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হিসেবে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১৫৪টি আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগুন দেওয়া হয়েছে ঢাকা সিটিতে। দিনে গড়ে পোড়ানো হয়েছে পাঁচটি বাস।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতীয় অর্থনীতিকে শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে উল্লেখ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি দেশের সাপ্লাই চেইনকে ভীষণভাবে বিঘ্নিত করছে, যার প্রভাব পণ্যের উৎপাদন, বাজার মূল্য এবং রপ্তানি ও সেবা খাতের উপরও পড়ছে।
এসময় রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে সব ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড পরিহারের আমন্ত্রণ জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
সভায় চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা, ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি, বিলাসী পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, এলসিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
মাহবুবুল আলম বলেন, তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক ও কর্মচারীদের চাহিদা অনুযায়ী মজুরি কমিশন গঠন এবং শ্রমিক-মালিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে – যা একটি অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ।
‘তা সত্ত্বেও তৈরি পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রকৃত শ্রমিকরা কোনোভাবেই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হতে পারে না,’ মন্তব্য করেন তিনি।
সম্প্রতি পোশাকখাতে সৃষ্ট সহিংস ঘটনায় বহিরাগতরা জড়িত বলে মন্তব্য করেন তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, প্রকৃত শ্রমিকরা কখনো নিজ কারখানায় আগুন দিতে পারে না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি পোশাকখাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।