আবারও অস্থির পেঁয়াজের বাজার। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার খবর প্রকাশের পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম।
রাতের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে কেজি প্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকায়। আর কেজিতে ৯০ টাকা বেড়ে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা। কেউ কেউ ২২০ টাকাও দাম হাঁকছেন।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর সূত্রাপুর, ধূপখোলা মাঠ বাজার, শ্যামবাজার, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজারসহ কয়েকটি বাজারে ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। নিজেদের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী মার্চ পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকবে। এই নির্দেশনা গতকাল শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল থেকেই রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কেজিপ্রতি ১২০ টাকা বেড়ে পেঁয়াজের দাম গিয়ে উঠেছে ২৪০ টাকা। আর ১০৫-১১০ টাকা কেজি দরের ভারতীয় পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাদের এখন দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এজন্য পাইকাররা দেশি পেঁয়াজ ছাড়ছেই না। শ্যামবাজারেও ভোরে যে দাম ছিল, সকাল ৯টায় তা মণপ্রতি ৮০০-১০০০ টাকা বেড়ে গেছে। বিকেল নাগাদ বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তারা।
সূত্রাপুর বাজারের খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলরাম সাহা বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। পাইকারি বাজারে আমাদের কেনাই বেশি পড়ছে। যে কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাবে পড়েছে। ভোরে শ্যামবাজার থেকে বহু কষ্টে এলসির (ভারতীয়) দুই মণ পেঁয়াজ এনেছি। আমি পাইকারিতে কিনেছি ৭ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে। আনতে খরচ পড়ছে ৪০০-৪৫০ টাকা। এখন ২০০ টাকা কেজি না বেচলে তো লস।
পাইকারি ব্যবসায়ী স্মৃতি বাণিজ্যালয়ের ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, শ্যামবাজারে পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজের মণ এখন ৮ হাজার ৮০০ টাকা। যা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে ২২০ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজের মণ ৭ হাজার ৬০০ টাকা। আর প্রতিকেজির দাম পড়ে ১৯০ টাকা। মূলত ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণায় এ দাম বেড়েছে। গতকাল সকালেও আমরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারিতে ১১০ টাকা বিক্রি করেছি। আজকে সকালে সেটা ২২০ টাকা বিক্রি করছি৷ তবে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে সম্পূর্ণরূপে উঠলে কমতে পারে দাম। আর ফেব্রুয়ারিতে নতুন পেঁয়াজের চাষ শুরু হলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে।
এ বিষয়ে শ্যামবাজারের মেসার্স রাজিব বাণিজ্য ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী প্রদেশ পোদ্দার বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমছে৷ ফলে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে দাম। কিন্তু উৎপাদন স্বাভাবিক থাকার পরও হঠাৎ কেন পেঁয়াজের বাজারে এই অস্থিরতা! জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ভারত সরকারের বেঁধে দেওয়া রপ্তানি মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার মূল্যেই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত ছিল। কিন্তু ইতোমধ্যেই ভারত সরকার আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের এমন সিদ্ধান্তের কারণে দেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের দাবি জানান তিনি।
সূত্রাপুরে বাজার করতে আসা হারুন শেখ বলেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২৪০ টাকা কেজির নিচে নেই। আর ভারতের পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি। দুদিন আগেও দেশি পেঁয়াজ কিনলাম ১২০ টাকা করে। রাতের মধ্যেই বেড়ে গেল ১২০ টাকা। এটা কেমন কথা দেশি পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা চাওয়া হয়েছে। এভাবে হলে আমরা কীভাবে চলবো!
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ড. গোলাম রহমান বলেন, ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে নিদারুণ কষ্টে পরিবার নিয়ে সময় কাটছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের। বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিতে অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে কিনা–সেটি খুঁজে বের করতে বাজার তদারকির বিকল্প নেই। দুর্ভাগ্য, এখনও মাঠ পর্যায়ে কাউকে দেখা যাচ্ছে না।