এবার পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে সেই শক্তিশালী আড়তদার সিন্ডিকেট। তাদের কারসাজিতে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২০০-২৪০ টাকা ঠেকানো হয়, যা ১১০-১৩০ টাকা ছিল। এবারই প্রথম নীরব প্রতিবাদ হিসাবে বাড়তি দাম দিয়ে পেঁয়াজ কেনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন ভোক্তা। ফলে পণ্যটি না কেনায় আড়ত থেকে সরবরাহ কমে যায়। অনেক গুদামেই নষ্ট হচ্ছে পেঁয়াজ। বস্তাবন্দি থাকায় পচন ধরেছে পেঁয়াজে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর থেকেই বাজারে নৈরাজ্য চলছে। তবে এবারই প্রথম ভোক্তারা এক হয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেঁয়াজ কেনা থেকে বিরত থাকতে প্রচারণা চালানো হয়েছে। ফলে ক্রেতারা বাড়তি দরে পেঁয়াজ কেনা থেকে বিরত ছিলেন। অতিপ্রয়োজন না হলে কেউ পেঁয়াজ কেনেননি। পাশাপাশি দেশি নতুন পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে আসতে শুরু করেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে সেই শক্তিশালী সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম কমাতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকা। একদিন আগে ২২০-২৪০ টাকা ছিল। তবে বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৩০ টাকা। পাশাপাশি আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বাজার খুব কম। তবে যেসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা, যা একদিন আগে ২০০ টাকা ছিল। আর বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছিল ১১০ টাকা। এছাড়া রাজধানীর খুচরা বাজারে পাতাসহ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৩০-১৪০ টাকা।
রাজধানীর কাওরান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় আমদানিকারকদের উসকানিতে আড়তদাররা এবার পেঁয়াজের দাম বাড়াতে শুরু করে। ফলে দেশের সব স্থানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এছাড়া খুচরা ব্যবসায়ীদেরও কিছুটা কারসাজি ছিল। তবে এবার আড়তদাররা আড়ত থেকে পেঁয়াজ সরিয়ে ফেলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সুবিধা করতে পারেননি। কারণ, বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠে গেছে। ক্রেতারা বাড়তি দামে পেঁয়াজ কেনা থেকে বিরত ছিলেন। যার দরকার হয়েছে, মুড়ি কাটা ও পাতাসহ পেঁয়াজ কিনছেন। সঙ্গে যে পেঁয়াজ আড়ত থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, বাজারে তদারকির কারণে সেগুলো আসতে পারছে না। ফলে গুদামে নষ্ট হচ্ছে পেঁয়াজ। অনেক ক্ষেত্রে বস্তায় পেঁয়াজে পচন ধরেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, বৃহস্পতিবারও শ্যামবাজারে আড়তে পেঁয়াজ ছিল। সেদিন আড়ত থেকে হঠাৎ দাম বাড়ানো হয়। অনেকেই শ্যামবাজারের আড়ত থেকে অন্যান্য গুদামে পেঁয়াজ সরিয়ে নেন, যা ইতোমধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে প্রকাশ পায়। শ্যামবাজারে অভিযান পরিচালনা চলমান থাকায় যারা পেঁয়াজ সরিয়ে নিয়েছেন, তারা এখানকার আড়তে পেঁয়াজ আনতে পারছেন না। এছাড়া দেশি নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় আগের পুরোনো পেঁয়াজ ক্রেতার প্রয়োজন হচ্ছে না। ফলে সব মিলে লুকিয়ে রাখা পেঁয়াজ লুকিয়েই নষ্ট হচ্ছে।