সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকায় নৌকার প্রার্থী এমপি মমিন মণ্ডলের সমর্থক শ্রমিক লীগ নেতা মোতালেব সরকারের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে আহত ফজলু (৪৫) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এ ঘটনায় জিন্নাহ নামে আরও একজন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলকুচি পৌর এলাকার সুবর্ণসাড়া গ্রামে মোতালেব হোসেন সরকারের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ফজলুল হক কুষ্টিয়া জেলার সদর উপজেলার মিনপাড়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র মামলাসহ মোট ছয়টি মামলা রয়েছে। আহত জিন্না সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার সদিয়া চাঁদপুর গ্রামের তাছের আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার পৌনে ২টার দিকে বিকট শব্দ শোনার পর মোতালেব সরকারের বাড়ির সামনে গেলে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। তবে কিছুক্ষণ পর কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে আহত অবস্থায় দুজনকে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। তারা আরও জানান, বোমা তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটতে পারে।
বেলকুচি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা বলেন, বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি। নৌকার প্রার্থী আব্দুল মমিন মণ্ডল এমপির সমর্থক মোতালেব সরকার নির্বাচনে নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নিজ বাড়িতে বোমা তৈরি করছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।
এদিকে বোমা বিস্ফোরণের তথ্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করে চারদিনে তথ্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের কাছ থেকেও সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ঘটনাটিকে প্রেশার কুকার বিস্ফোরণ বলে সাংবাদিকদের জানান। ঘটনার তিনদিন পর শুক্রবার আহত ফজলু মারা যান।
নিহত ফজলুর ভাই মজনু বলেন, বুধবার (২০ ডিসেম্বর) জানতে পারি আমার ছোট ভাই ফজলু বোমা হামলায় আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে আমরা ঢাকা মেডিকেল যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি সিরাজগঞ্জের বেলকুচির মোতালেব নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা বোমা তৈরির জন্য আমার ভাইকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে বোমা বিস্ফোরণেই ফজলু আহত হয়েছেন। তাকে একদিন লুকিয়ে রেখেছিল মোতালেব। পরে তার চিৎকার সইতে না পেরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
নিহত ফজলুল মেয়ে জামাই রকি বলেন, শুক্রবার দুপুরে মারা গেছে। শনিবার সন্ধ্যাতেও মরদেহ আমাদের দেওয়া হয়নি। আমরা খুব কষ্টে আছি। এখনও মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ওই ব্যক্তি শুক্রবার সকালে মারা গেছেন। শরীরে আঘাতের যে চিহ্ন রয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে বোম ব্লাস্টে তিনি আহত হয়েছিলেন। চিকিৎসক লিখেছেন বোমা বিস্ফোরণে তিনি মারা গেছেন। এ ঘটনায় মামলা হলে সিরাজগঞ্জে হবে। আমরা সিরাজগঞ্জের ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, ওনারা এখনও সিদ্ধান্ত জানায়নি।
অভিযুক্ত শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেব সরকার বলেন, আমরা নৌকার ভোটের জন্য কাজ করছি। মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িতে রান্নার সময় প্রেশার কুকারটি বিস্ফোরিত হয়। এতে কেউ আহত হয়নি। বোমা বিস্ফোরণে একজন নিহতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তিকে আমি চিনি না।
বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিছুর রহমান জানান, আমরা এখন পর্যন্ত শিওর না ঘটনাটি মোতালেবের বাড়িতে ঘটেছে। আমরা তদন্ত করছি। ফজলু নামে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।