ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছে বিভাগের একজন নারী শিক্ষার্থী।
শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। অভিযোগের সংযুক্তি হিসেবে কিছু অডিও রেকর্ড ও স্ক্রিনশট দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে একই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ব্যক্তিগত আক্রোশে নম্বর কম দেওয়ার লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগপত্রে ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, ২০২২ সালে করোনার পর উনাকে আমরা প্রথম ক্লাসে পাই। প্রতি ক্লাসেই তিনি অ্যাসাইনমেন্টের বিষয় নির্ধারণ করতে বলতেন এবং তা অনুমোদনের জন্য সরাসরি ফোন দিতে বলতেন। এ সুবাদে আমি তাকে চারবার ফোন দিই, কেননা তিনি বারবার বিষয় বাতিল করছিলেন। প্রতিবার ফোন দিলে তিনি রাতে কলব্যাক করতেন এবং কমপক্ষে এক ঘণ্টা কথা বলেছেন। এ সময় তিনি ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
নারী শিক্ষার্থী বলেন, তিনি আমার শারীরিক অবয়ব সম্পর্কে নোংরা মন্তব্য করতেন এবং যৌন উত্তেজনা প্রকাশ করতেন। একই সঙ্গে বাজে জিনিস কল্পনা করতে প্ররোচিত করতেন। বিষয়টি সহ্যের সীমার বাইরে যেতে থাকল। উনি বিভাগের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আমাকে নজরদারি করতেন। এছাড়া অন্য শিক্ষার্থীদেরও নজরদারি করতেন এবং তাদের নিয়ে আমার কাছে বিভিন্ন মন্তব্য করতেন।
অভিযোগপত্রে ওই নারী আরও উল্লেখ করেন, উনার সঙ্গে কথা বলাটা ছিল আমার জন্য যন্ত্রণাদায়ক। আমি ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করলাম। কারণ আমি ঘুমাতে পারতাম না। উনার বাজে কথাগুলো আমার চিন্তায় আসত। আমি চোখ বন্ধ করলে আজেবাজে স্বপ্ন দেখতাম। আমি প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকতাম। একপর্যায়ে এ যন্ত্রণার পরিমাণ এতটাই বেড়ে যায় আমি কাউন্সিলিংও করি।
নাদির জুনাইদের যৌন হয়রানিতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করবেন উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, উনি আমাদের সামনের চেয়ারপারসন। শুধু এ ভয়ে আমার পরিবারের কাছে দেড় বছর আগে থেকে বলতে হচ্ছে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করব না। দরকার হলে নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব।
নাদির জুনাইদকে মানসিকভাবে অস্থিতিশীল উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে বলা হয়, উনি পরিচয়ের শুরুতে সুন্দর আচরণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করেন। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আমার সঙ্গে কথোপকথনের সময়ও উনি বিভিন্ন নারী শিক্ষার্থীদের নাম উল্লেখ করতেন। এমনকি বিভিন্ন সময় তাদের শারীরিক অবয়ব নিয়েও নোংরা মন্তব্য করেছেন। আমার মতো অনেক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময় বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক নাদির জুনাইদ গণমাধ্যমকে বলেন, কয়েকদিন ধরে আমার বিরুদ্ধে যেভাবে লেখালেখি হচ্ছে। এরপরই আমি থানায় জিডি করেছি।
প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, অভিযোগপত্রটা পেয়েছি। এটা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।