দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সবচেয়ে বেশি অনলাইন বুলিইংয়ের শিকার হয়েছেন। এমন তথ্য উঠে এসেছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশে আসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এর প্রতিবেদনে। তাদের টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশন (টিএএম) ১৬ মার্চ আইআরআই-এর ওয়েবসাইটে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে সামাজিকে যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর, গুজব ও বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক আক্রমণ চালানো হয়েছে, যার সিংহভাগের জন্য দায়ী ছিলো বিএনপি। আপত্তিকর কথা এবং পোস্ট বিশ্লেষণ করে এই ফলাফল উঠে এসেছে টিএএম-এর গবেষণায়।
২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রচারের সময়কাল এবং নির্বাচনের দিনসহ অন্যান্য সময়ে আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় সহিংসতা কম হয়েছে বলে এনডিআই-আইআরআই-এর প্রতিবেদন বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নিরাপত্তায় সরকার বাড়তি নজর দেয়ায় সহিংসতা কম হয়েছে। তা সত্ত্বেও, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের গুণগত মান ক্ষুণ্ন হওয়ার কারণ হিসেবে বিরোধী দলগুলোর সহিংসতাকে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
নির্বাচনকালীন সময়ে, বাংলাদেশ সরকার নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: নির্বাচনী নিরাপত্তার জন্য বাজেট বাড়ানো, দীর্ঘ সময় ধরে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করার জন্য অ্যাডহক সমন্বয় ইউনিট গঠন।
নির্বাচনী সহিংসতার কথা উঠে এসেছে এনডিআই-আইআরআই-এর প্রতিবেদনে। সংঘর্ষ, প্রচার মিছিলে হামলা, প্রচার কার্যালয় ধ্বংস বা অগ্নিসংযোগ, মৌখিক হুমকি, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের কথা বলা হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বে নির্বাচন ঠেকাতে সমাবেশ, অবরোধ, ধর্মঘট, যানবাহন ও স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, হামলা, ভাঙচুর, ভীতি প্রদর্শনসহ সহিংসতার কথা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বিএনপির গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে নয়াপল্টনে সংঘর্ষে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজ নিহত হওয়ার ঘটনাটি ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রান্তিক গোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও নির্বাচনী সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছে বলে এনডিআই-আইআরআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে নারীদের লক্ষ্য করে নির্বাচনী সহিংসতা অতীতের তুলনায় কম ছিল। টিএএম তাদের পর্যবেক্ষণে পেয়েছে যে, বাংলাদেশের আইনি কাঠামো লিঙ্গ- ভিত্তিক সহিংসতা সম্পূর্ণভাবে মোকাবেলা করতে পারেনি।
এর কারণ হিসেবে রাজনীতিবিদ ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব এবং তাদের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নির্বাচনী সহিংসতার শিকার হয়েছে। তবে বিগত নির্বাচনের তুলনায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে নির্বাচনী সহিংসতা কম ছিল।
ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলোতে নির্বাচনী সহিংসতা মোকাবেলায় বেশ কিছু সুপারিশ করেছে টিএএম। নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য একটি আচরণবিধি প্রণয়ন এবং নির্বাচনী সহিংসতা সম্পর্কিত মামলাগুলোর দ্রুত ও স্বাধীন বিচার ও পর্যালোচনা প্রদানের জন্য আইনি কাঠামো হালনাগাদ করার মতো নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচনের স্বাধীনতা ও তদারকি উন্নত করা যেতে পারে বলে মনে করছে টিএএম।