All Postশিক্ষাঙ্গন

রাজনীতি মুক্ত বুয়েটের ‘আশা’ আদালতে তুলে ধরার দাবি

শিক্ষার্থীদের রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসের ‘আশা’ আদালতে তুলে ধরতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সোমবার বিকেলে সোমবার বিকেলে বুয়েটের এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেউই রাজনীতি চায় না। তারা মনে করেন, ছাত্ররাজনীতিবিহীন অবস্থায়ই ক্যাম্পাস সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব।

শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভিসির কাছে আবেদন তিনি সকল আইনি বিষয় মেনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আশা সেটা তিনি আদালতের কাছে তুলে ধরবেন।

ছাত্ররাজনীতি বিরোধী আন্দোলনে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন অপপ্রচার এবং মিডিয়াতে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচারের প্রেক্ষিতে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিবৃতি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে বলে সোমবার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে স্থগিত করা হয়েছে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপন।

আর ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ওই প্রজ্ঞাপনকে কেনো অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বীর পক্ষে রিট করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রিটে শিক্ষা সচিব ও বুয়েটের উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।

২০১৯ সালে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বুয়েট ক্যাম্পাসে।

গত বুধবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ বুয়েটে অনেকের প্রবেশের পর উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।

এরপর সেখানকার কয়েকজন শিক্ষার্থী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছয় শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দাবি তুলেছেন।

তবে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অনেকে। রোববার বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে ছাত্রলীগ।

সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, বুয়েটের এই সিদ্ধান্ত মৌলিক অধিকার পরিপন্থী, সংবিধান পরিপন্থী, শিক্ষাবিরোধী সিদ্ধান্ত।

আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আদালত ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।

আদালতের আদেশের পর বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজমুদার বলেছেন, আদালতের আদেশ শিরোধার্য।

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি।

বুয়েটে রাজনীতি বন্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলা হয়, আমরা বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি রাখবো যে, এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে তুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যেই ছাত্ররাজনীতি র‌্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহার এর পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদেরকে তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনে নি, আনবেও না। এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা সাবেকুন্নাহার সনি আপু, আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সর্বশেষ আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি।

তারা বলেন, ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে পারি।

বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীরাও তাদের দাবি সঙ্গে একমত বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

বিবৃতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ভিসি স্যারকে এই আর্জি জানাচ্ছি তিনি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা তা সকল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে পূরণ করেন।

এ সর্ম্পকিত সংবাদ

Back to top button