বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে ভোট নেয়া শুরু হচ্ছে শুক্রবার থেকে। সাত দফায় দেশটির প্রায় ৯৭ কোটি ভোটার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পছন্দের জনপ্রতিনিধিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। ফলে এ নির্বাচন হতে চলেছে বিশ্বের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় নির্বাচন। ফল ঘোষণা করা হবে আগামী চার জুন। এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব।
নির্বাচনে মূল লড়াই হচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইনডিয়া’ জোটের মধ্যে। ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের মূল দল ভারতীয় জনতা পার্টি এককভাবে এবার ৩৭০ আসনের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে। আর জোটগতভাবে তাদের লক্ষ্য ৪০০ আসন।
শুক্রবার ভোটকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। প্রথম দফায় ১৯ এপ্রিল ১০২টি আসনে ভোট হবে। ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ভারতজুড়ে তিন ধাপে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
ভারতের সিইসি জানান, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার কর্মী সমন্বিত কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৩ হাজার ৪০০টি কোম্পানির সমন্বয়ে ৬ থেকে ৭ ধাপে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণ এক মাসের বেশি সময় ধরে হতে পারে।
সেনাবাহিনী, কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স ও রাজ্য পুলিশ কঠোর নজরদারিতে রয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের সময় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য দেড় কোটি নির্বাচনকর্মী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করবে নির্বাচন কমিশন।
এবার সাড়ে ১০ লাখ ভোটকেন্দ্রে ৫৫ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট দেবেন। অনেক ভোটকেন্দ্র হবে অতি-দুর্গম। কোনোগুলি সুউচ্চ হিমালয়ের তুষারঘেরা পর্বতের কোলে, আবার গা পোড়ানো উষ্ণতার রাজস্থানের মরুর বুকেও চলবে ভোটগ্রহণ। এমনকি দ্বীপপুঞ্জগুলোও বাদ যাবে না।
নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা ৯৬ কোটি ৮৮ লাখ। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ৪৭ কোটি ১০ লাখ, আর পুরুষ ৪৯ কোটি ৭০ লাখ। ৪৮ হাজার ট্রান্সজেন্ডার ভোটার ছাড়াও শতবর্ষী ভোটারের সংখ্যা দু’লাখেরও বেশি। একই সঙ্গে ৮৫ বছরের বেশি ভোট দাতার সংখ্যাও প্রায় ৮২ লাখ।
ভারতজুড়ে এবার ২ হাজার ৬৬৬টি নথিভুক্ত রাজনৈতিক দল লোকসভায় ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে বিজেপি, কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বহুজন সমাজবাদি পার্টির মতো জাতীয় রাজনৈতিক দল যেমন রয়েছে, তেমনই মমতার তৃণমূল, লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মতো শক্তিশালী প্রাদেশিক দলও রয়েছে।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর রয়েছে নিজস্ব প্রতীক- যেমন কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রতীক পদ্ম, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের হাত আর অন্যান্য দলের হাতি থেকে শুরু করে বাইসাইকেল, চিরুনি বা তীর নানাবিধ প্রতীক রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে নির্বাচনী প্রতীক ভোটের মাঠে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের যে তিন রাজ্যে সাত দফায়ই ভোট নেয়া হচ্ছে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের প্রথম দফা ভোটের তালিকায় আছে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার। এছাড়া উত্তরপ্রদেশ ও বিহারেও সাত দফায় ভোট হবে এবারের নির্বাচনে। সে হিসাবে ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় উত্তরপ্রদেশে ৮ আসন, বিহারের চার আসনে ভোট নেয়া হবে।
তবে, মহারাষ্ট্র দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লোকসভা আসনের রাজ্য হলেও সেখানে ভোট নেওয়া হচ্ছে ৫ দফায়। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর ৩৯ আসনের সব কটিতে ভোট হয়ে যাচ্ছে প্রথম দফায়। এরপর রয়েছে বিজেপির ক্ষমতাকেন্দ্র রাজস্থান, সেখানে ২৫ আসনের অর্ধেক অর্থাৎ ১২টি আসনে এদিন নির্বাচন হবে।
ভোট হবে পূর্ব ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই। এসবের মধ্যে রয়েছে অরুণাচল, আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম ও ত্রিপুরা । এছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের সংঘাত বিধ্বস্ত মণিপুরের দুটি আসনেই ভোট হবে শুক্রবার। ওই রাজ্যের একাধিক গোষ্ঠী ও সংগঠন ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছে। আসামের পাঁচ আসন ডিব্রুগড়, জোড়হাট, কাজিরাঙ্গা, লখিমপুর ও সনিৎপুরে ভোট হবে শুক্রবার।