২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে তা পুনর্বহালের শর্ত হিসেবে ১৬ দফা অ্যাকশন প্ল্যান দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। পরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেগুলো বাস্তবায়ন করার দাবি করে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের অনুরোধ করা হলেও তা বার বার প্রত্যাখ্যান করে আরও উন্নতি করার পরামর্শ দিয়ে এসেছে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এক দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো এই সুবিধা ফিরিয়ে আনতে পারেনি বাংলাদেশ। এরপর আবারো ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘ইউএস-বাংলাদেশ টিকফা ইন্টারসেশনাল মিটিং’ -এ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শ্রমিক অধিকার রক্ষায় ১১ দফা অ্যাকশন প্ল্যান তুলে ধরা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এই অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নে জিএসপি সুবিধা প্রাপ্তির পথ সুগম হবে। কিন্তু এর যৌক্তিকতা নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন।
জিএসপি হলো এমন একটি সুবিধা যার আওতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে ৯৭ থেকে শতভাগ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধাকিার পায়। যেটা বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ের বড় বাজার ইউরোপ থেকে পেয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
বাংলাদেশকে শ্রম অধিকার, অগ্নি ও ভবন মানদণ্ড লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা বৃদ্ধি ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সুইপিং ক্ষমতাপ্রাপ্ত পরিদর্শক নিয়োগ দিতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হলে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করা এবং ইউনাইটেড স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে ঋণ পাওয়া সহজতর হবে।
গত ২১ এপ্রিল ঢাকায় বৈঠকের পর বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেয়া বাণিজ্য বিভাগের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, বাংলাদেশে শ্রম অধিকার পরিস্থিতির উন্নতি করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমরা শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পেতে পারি।
মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতা এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের সহকারী ইউএসটিআর প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কথা উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব বলেন, আমরা ইউনাইটেড স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ফান্ডের সুবিধাও নিতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া অ্যাকশন প্ল্যানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে ইউনিয়ন সংগঠক, শ্রমিক ও আইনি প্রতিবাদ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হয়রানির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের প্রতিরোধ ও জবাবদিহি করতে অর্থবহ পদক্ষেপ নিতে হবে। শ্রমিক এবং কর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগগুলো বাদ দিতে বা সুরাহা করতেও বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সরকারকে বাংলাদেশ শ্রম আইনের অধীনে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী কারখানা মালিক, ব্যবস্থাপনা ও ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে এবং এ ধরনের লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত করতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
অ্যাকশন প্ল্যানে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করে বাংলাদেশ শ্রম আইন (বিএলএ) সংশোধন করতে হবে।
ইউনিয়ন গঠনের চেষ্টার সময় শ্রমিকদেরকে অফিশিয়াল সংখ্যায় জানার অনুমতি দিতে বলা হয়েছে অ্যাকশন প্ল্যানে। পাশাপাশি রেজিস্ট্রার রাখতে না পারা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনি