আমরা ইউরোপীয়রা আমাদের চারদিকে বন্ধুদের জন্য একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি চারদিকে আগুনের বলয় তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল। ভবিষ্যতে ইউরোপ মারা যেতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সম্প্রতি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতার তিনি এ মন্তব্য করেন। একইসাথে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ, ফিলিস্তিন ইস্যু, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, চীনের শক্তি বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ইউরোপের নির্ভরশীলতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
জোসেফ বোরেলের বক্তব্য ইউরোপীয় এক্সটারনাল সার্ভিসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। ইরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পার্সটুডের বরাতে তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।
বোরেল বলেন, স্নায়ুযুদ্ধের পরে আমরা যে এক মেরু কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম তা এখন আর সেই অবস্থায় নেই। কেননা যুক্তরাষ্ট্র তার আধিপত্যবাদী অবস্থান হারিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ১৯৪৫ সালের পর বহুপাক্ষিক বিশ্ব ব্যবস্থার ধারণা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছিল। কিন্তু গত ৩০ বছরে, বিশ্বের জিডিপিতে চীনের অংশীদারিত্ব ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ২০ শতাংশ হয়েছে। অথচ আমরা ইউরোপীয়রা ২১ শতাংশ থেকে ১৪শতাংশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নেমে এসেছি। এটা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি নাটকীয় পরিবর্তন।
তিনি আরও বলেন, চীন আমাদের এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিরাট প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। শুধুমাত্র সস্তা পণ্য উৎপাদনে নয়, একইসাথে বড় সামরিক শক্তি হিসেবে ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এমন উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে তারা আগামীতে আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। চীন একদিকে রাশিয়ার সাথে নজিরবিহীন বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে অন্যদিকে বিরাট সামরিক শক্তি অর্জন করেছে। বলা যায় চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খেলোয়াড় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।
চীন ব্রিক্সের সদস্য হোক বা অন্য কোনো জোটের সদস্য হোক না কেন সব ক্ষেত্রে নিজেদের শক্ত অবস্থানকে ধরে রেখেছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান বলেন, এই অবস্থান ধরে রাখার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে চীন নিজেদের স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার দেয় এবং কারো পক্ষ হয়ে কাজ করে না। আমরা ইউরোপীয়রা আমাদের চারদিকে বন্ধুদের জন্য একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি চারদিকে আগুনের বলয় তৈরি হয়েছে। এই আগুনের বলয় মধ্যপ্রাচ্যের উপকূলীয় এলাকা থেকে শুরু করে ককেশাস এবং ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র পর্যন্ত পৌঁছেছে।
জোসেফ আরও বলেন, বিশ্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রণালীতে, যেমন লোহিত সাগর এলাকায় ইউরোপের নৌবাহিনী সেখানে সংঘাতে জর্জরিত। এছাড়াও দুটি জায়গায় যুদ্ধ চলছে যেখানে মানুষ তাদের জমি ফিরে পাবার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। একটি হচ্ছে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড আর অন্যটি হচ্ছে ইউক্রেন। এক পক্ষ বলছে এটি আমাদের জমি অন্য পক্ষ বলছে, না এটি আমাদের জমি। জমির জন্য এই লড়াইয়ে অনেক রক্ত ঝরবে।
আমরা কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করছি জানিয়ে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর ভবিষ্যতের জন্য কোনো সমস্যা নয়। জলবায়ুর বিপর্যয় সাময়িক তবে তা আগামীর জন্য সমস্যা নয়। এছাড়া প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, বিশেষ করে, সবাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে যে কথা বলছে তা এমন পরিবর্তন আনবে যা সম্পর্কে আমরা এখনই পুরোপুরি বুঝতে অক্ষম।
তিনি যোগ করেন, জনসংখ্যাও দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং যখন আমি জনসংখ্যার ভারসাম্য নিয়ে কথা বলি, তখন আমি অভিবাসনের কথা বলছি, বিশেষ করে আফ্রিকায় যেখানে ২০৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ বসবাস করবে। ২০৫০ সালে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন আফ্রিকায় বাস করবে যখন আমরা ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, গণতন্ত্র সঙ্কুচিত এবং স্বাধীনতা বিপন্ন হতে দেখছি।
যাই হোক, এই ছবির আলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা এবং ব্রিটেনের ভূমিকাকে সংজ্ঞায়িত করতে হবে উল্লেখ করে বেরোল বলেন, তবে, আমরা সতর্কবার্তা শুনছি যে ইউরোপ মারা যেতে পারে। কিন্তু আমাদের কি ভূমিকা থাকা উচিত সেটাই প্রশ্ন।
জোসেপ বোরেল ফন্টেলেস একজন স্প্যানিশ রাজনীতিবিদ। তিনি ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সভাপতি এবং ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত স্পেন সরকারের পররাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সহযোগিতা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বোরেলকে ইউরোপীয় কাউন্সিলের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা এবং তিনি পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা