সোমবার , ২০ মে ২০২৪ | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. London Mirror Specials
  2. অন্যান্য
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জেলার খবর
  9. ঢাকা
  10. তথ্য-প্রযুক্তি
  11. প্রবাসের কথা
  12. বরিশাল
  13. বাংলাদেশ
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

রাইসির আকস্মিক মৃত্যু দুর্ঘটনা না ইসরাইলী ষড়যন্ত্র?

প্রতিবেদক
Newsdesk
মে ২০, ২০২৪ ১১:৪০ অপরাহ্ণ

ইরানের মানুষের কাছে এই মুহূর্তে নির্মম শোকের খবর হলো তাদের প্রিয় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আর নেই। সোমবার সকালে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের পাহাড়ি ও তুষারাবৃত এলাকায় রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায় অনুসন্ধান দল। এর কিছুক্ষণ পরেই খবর আসে, রাইসি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানসহ হেলিকপ্টারে থাকা সবাই নিহত হয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ মোখবারের নাম অনুমোদন করেছেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। তিনি দুই মাস এ দায়িত্ব পালন করবেন। আপাতভাবে আকস্মিক দুর্ঘটনার জেরেই রইসির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে দেশটির নাম ইরান আর তার শত্রু দেশের নাম ইসরাইল বলেই যারা সন্দেহপ্রবণ, তারা এই দুর্ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন।

risi2পূর্ব আজারবাইজান সীমান্তে রোরবার এক কমূসূচিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি

ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা এবং রয়টার্স জানিয়েছে, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ভেঙ্গে পড়ে পড়ে রইসিকে বহন করা কপ্টারটি। সেই সময় দুর্ঘটনাস্থলে ভারী বৃষ্টি এবং ঘন কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা খুব কম ছিলো বলে একাধিক মাধ্যমে জানা গেছে। তখনই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ওঠেছিলো, বাজে আবহাওয়ার খবর ইরানি কর্তৃপক্ষের কাছে থাকার কথা। এরপরও কেন রাইসিকে নিয়ে উড়ে গেলো হেলিকপ্টারটি?

প্রেসিডেন্ট রাইসির সফরসঙ্গীদের বহনে নিয়োজিত ছিলো তিনটি হেলিকপ্টার। এর মধ্যে যেটিতে রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, সেটিই দুর্গম পাহাড়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বিধ্বস্ত হয়। অন্য দুইটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছালেও, কেন রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সাথে এমন ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। দুর্ঘটনা নাকি ষড়যন্ত্র তা নিয়েও চলছে বিচার-বিশ্লেষণ।

risi3পূর্ব আজারবাইজান সীমান্তে শনিবার স্থানীয়দের মাঝে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর ইরানসহ ও ফিলিস্তিনপন্থী লাখো মানুষের আঙ্গুল এখন ইসরাইলের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের দিকে। তাদের ষড়যন্ত্র মনে প্রশ্ন উঠেছ, এই দুর্ঘটনার সঙ্গে মোসাদের সম্পর্কে নেই তো? এই গোয়েন্দা সংস্থাটি কোন গুপ্ত কৌশল রচনা করে রাইসিকে হত্যা করলো কিনা, তাদের মনে উঠছে সে প্রশ্নও। ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইরান-ইসরাইল সম্পর্ক সবচেয়ে বাজে অবস্থায় রয়েছে।

ইরান এখন পর্যন্ত বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম বলছে, ভারি বৃষ্টিপাত আর ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইটের দৃষ্টিসীমায় ব্যাঘাত ঘটেছে। তবে এই দুর্ঘটনায় শত্র“পক্ষের জড়িত থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট রাইসির মেয়াদ ও ইরানের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে দেশি শত্রু, এমনকি ইসরাইলের মতো বহিরাগত শক্তির সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয় নিয়েও অনেকে আলোচনা করছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান এবং ইসরাইলের ঐতিহাসিক বৈরী সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পেছনে ইসরাইল জড়িত থাকতে পারে বলে কিছু ইরানি সন্দেহ করছেন। দামেস্কে ইসরাইলের একজন ইরানি জেনারেলকে হত্যা ও পরে ইসরাইলে ইরানের শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনা বিবেচনায় এই তত্ত্ব নিয়ে অনেকেই কথা বলছেন।

ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে চোরাগোপ্তা এবং নিখুঁত অভিযান চালানোর জন্য ইসরাইলের দুর্র্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ব্যাপক পরিচিতি আছে। যদিও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা কখনোই কোনো রাষ্ট্রের প্রধানকে লক্ষ্যবস্তু বানায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় সন্দেহবাদীদের ইসরাইলি সংশ্লিষ্টতার তত্ত্ব নাকচ করে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে হত্যার ঘটনা সরাসরি যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাবে। এমনকি ইরানের পক্ষ থেকে নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া আসবে। যদিও ঐতিহ্য বিবেচনায় ইসরাইলের কৌশলগত অবস্থান উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পরিবর্তে সামরিক এবং পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতেই রয়েছে।

ইকোনমিস্ট বলছে, রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইসরাইলের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করার জোরালো কারণ রয়েছে। ইসরাইল কখনো কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করার মতো এতদূর অগ্রসর হয়নি। এর অর্থ হবে দ্ব্যর্থহীন যুদ্ধ; যা ইরানের তীব্র প্রতিক্রিয়া উসকে দেবে।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথম কথা হলো এরকম একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। ব্যর্থতার কারণেই এটা ঘটেছে। ব্যর্থতা কি সিকিউরিটি রিলেটেড, নাকি টেকনিক্যাল না অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ এটি অন্যান্য তথ্যাবলি পাওয়ার পরে আমরা হয়তো বলতে পারব। এটি শুধু অভ্যন্তরীণভাবেই প্রভাব বিস্তার করবে তা নয়। রিজিওনালি এবং আন্তর্জাতিকভাবেও এর প্রভাব আমরা টের পাব শর্টটার্মে অথবা মিডটার্মে। তিনি বলেন, এই অ্যাক্সিডেন্টটা কখন হলো এটাও একটা বিষয়। যেমন ইসরাইলের সঙ্গে যে সমস্যাটা চলছে ইরানের, সেটাও গুরুত্ব বহন করছে।

তাছাড়া বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইরান বিভিন্ন ধরনের ইকোনমিক ইনিশিয়েটিভ নিয়েছে তাতেও এর প্রভাব পড়ছে। আমরা যদি একসঙ্গে অন্যান্য তথ্যাবলি মেলাতে না পারি, তবে সঠিকভাবে বুঝতে পারব না ঘটনাটা কেন ঘটল। তবে এর যে একটা প্রভাব পড়বে এর মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত আর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই হেলিকপ্টারটি অনেক পুরোনো ছিল। ১৯৭২ সালের তৈরি এই হেলিকপ্টার। প্রচণ্ড কুয়াশা ছিল। তুষারপাতের কথাও ছিল। এটি দুর্ঘটনাও হতে পারে। তিনি বলেন, উনি যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশে গিয়েছিলেন। সেই প্রক্রিয়ায় ইরানের সমর্থনে ইসরাইল বিরোধীরা যেভাবে একটা যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করেছিল সেই জায়গায় শ্লথগতি আসতে পারে।

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে সরাসরি ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠনটির পক্ষই নেয় ইরান। ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়তে পশ্চিম এশিয়ায় লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের মতো দেশে প্রক্সি বাহিনী গড়ে তুলেছে তেহরান। আর এর পেছনে কার্যকরি ভূমিকা নিয়েছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। সম্প্রতি ইসরাইলের মাটিতে ইরানের প্রথম হামলার পেছনে রাইসি মূল ক্রীড়ানক ছিলেন বলে অভিযোগ আছে পশ্চিমাদের।

রোববার প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আজারবাইজান সীমান্তে এক কর্মসূচি সেরে তেহরান ফিরছিলেন। পড়শি রাষ্ট্র হলেও আজারবাইজানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক সব সময়েই শীতল। এর পেছনে বড় কারণ ইসরাইলের সঙ্গে আজারবাইজানের। এমনকি দেশটির মোসাদকে সাহায্য করারও ইতিহাস রয়েছে। অসমর্থিত এক সূত্র জানাচ্ছে, দুর্ঘটনার দিন আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে নেমেছিলো একটি মার্কিন সামরিক বিমানও।

raisi5ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি (মাঝে) রোববার পূর্ব আজারবাইজানের কিজ কালাসি এলাকায় এক কর্মসূচিতে অংশ নেন

বিষয়টি মহা-কাকতালীয় ঘটনা হিসাবে দেখতে চাইছেন না অনেকে। দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে ব্যস্ত। বলতে চাইছেন, ইসরাইলের মোসাদ আর আমেরিকার সিআইএ তো একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। যদিও ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের যারা বিরোধী, তাদেরও কিছু যুক্তি রয়েছে। সেগুলোর একটি হলো, ইসরাইল বা মোসাদ অতীতে কখনও কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের উপর সরাসরি হামলা চালায়নি।

বরং চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে, শত্রু দেশের সামরিক পরিকাঠামো নষ্ট করা, কিংবা অর্থনৈতিক স্বার্থকে নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে মোসাদের বিরুদ্ধে। তবে ব্যক্তিটির নাম রাইসি বলেই অনেকে এই অলিখিত নীতিতে বদলের সম্ভাবনা দেখছেন। তাদের ধারণা, পরমাণূ কর্মসূচি এগিয়ে নেয়া এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কঠোর অবস্থানের কারণে রাইসি ইসরাইল তথা পশ্চিমাদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন।

raisi7
মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী নেতা হিসাবে আবির্ভূত ইব্রাহিম রাইসি ইরানের তাবৎ শক্রদেশের কোপে পড়লেন কি না তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনান ডানাপালা মেলতে শুরু করেছে। আবার বহু গোষ্ঠী এবং সম্প্রদায়ে  বিভক্ত ইরানের কেউ বা কারা ‘পথের কাঁটা’ রাইসিকে সরাতে ষড়যন্ত্র করল কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও। তবে এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর আদৌ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা।

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক