সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন করার পর মরদেহ টুকরো টুকরো করে ব্যাগভর্তি করে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দুইজন ব্যক্তি ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে লিফটে নিচে নামছেন। তাদের কাছে একটি হালকা সবুজ রঙের ট্রলি। হাতে কয়েকটি পলিব্যাগ।
ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ বলছে, তিনবারের সংসদ সদস্য আনারকে হত্যার নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে হত্যার পর তার মরদেহ টুকরো টুকরো করা হয়।
হাড় থেকে মাংস আলাদা করে বানানো হয় কিমা। টুকরো টুকরো করে ফেলা হয় হাড়ও। মাংসে মাখানো হয় হলুদ ও মশলা। এরপর তা পলিব্যাগ ও ট্রলিতে ভরে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়।
আর ফেলা দেয়া দেহাংশের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ, কিন্তু কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এরি মধ্যে সঞ্জীভা গার্ডেন নামের ওই বাড়িটির সিসিটিভির ফুটেজ থেকে প্রকাশ করেছে কলকাতা পুলিশ।
ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ১৪ মে ভোর ০৫টা ০৫ মিনিট। ফ্ল্যাটের দরজার সামনেই লিফট। হালকা সবুজ রঙের ট্রলি নিয়ে ফ্ল্যাট বের হলেন একজন। তার পরনে জিন্সের সঙ্গে ইন করা হালকা গোলাপি রঙের হাফহাতা শার্ট। পায়ে সাদা কেডস। গলায় ঝোলানো পাসপোর্ট বহনকারী ছোট ব্যাগ। ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে সোজা দাড়ালেন লিফটের সামনে।
ট্রলি দাঁড় করিয়ে নিচে নামার বাটনে চাপ দিলেন। এরপর পেছনে ফিরে তাকালেন। ফ্ল্যাট থেকে বের হলেন সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা আরেকজন। তার হাতে বেশ কয়েকটি পলি ব্যাগ। তিনি দাঁড়ালেন লিফটের সামনে।
গোলাপি শার্ট পরা লোকটি ফ্ল্যাটের দিকে এগিয়ে গেলেন। কয়েক সেকেন্ড সময় নিলেন দরজা লক করতে। ফিরে এলেন লিফটের সামনে। লিফটের দরজা খোলার পর দুজনে ঠিকমতা প্রবেশ করে নিচে নেমে গেলেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দুজনের একজন হলেন- চরমপন্থি সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানুল্লাহ আমান বা শিমুল ভূঁইয়া। আরেকজন কসাই জিহাদ হাওলাদার।
গত ১২ মে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।
বুধবার সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়।
খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।
পুলিশ বলছে, পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড হলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি আখতারুজ্জামান শাহিন। এমপিকে হত্যার পর মরদেহের মাংস কিমা ও হাড় টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়।
কয়েকজন হত্যাকারীকে নিয়ে এ কাজে নেতৃত্ব দেন চরমপন্থি নেতা শিমুল। তিনি পরিচয় গোপন করে আমানউল্লাহ আমান নামে পাসপোর্ট করে কলকাতা যান।
হত্যা পরিকল্পনা করার পর মুম্বাই থেকে ভাড়া করে আনা কসাই জিহাদকে। মরদেহ কেটে টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয় কসাই জিহাদ।
এরপর বান্ধবী শিলাস্তিকে নিয়ে ঢাকায় ফেরেন শিমুল ভূঁইয়া। আখতারুজ্জামান শাহিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে শাহিন দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার ভোরে জিহাদকে গ্রেপ্তারের পর তাকে নিয়ে মরদেহের খণ্ডিতাংশ খুঁজতে রাতে বিভিন্ন জাগায় অভিযান চালালেও কিছু পাওয়া যায়নি। শুক্রবার ১২ দিনের হেফাজতে পাওয়ার পর কসাই জিহাদ নিয়ে আবার মরদেহের সন্ধানে অভিযানে নেমেছে কলকাতা পুলিশ।
এদিকে ঢাকায় গ্রেপ্তার হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক ও চরমপন্থি নেতা শিমুল ভুঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ডে পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।