ভারতে প্রায় দেড় মাস ধরে চলা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোটযজ্ঞ শেষে এখন চলছে গণনা। দিল্লির মসনদে এনডিএ জোট (নরেন্দ্র মোদী) নাকি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট (রাহুল গান্ধী), চলছে সেই প্রক্রিয়া। গত দুটি নির্বাচনের চেয়ে এবার লোকসভায় কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বাড়তে চলছে। তবে এরপরও দিল্লির মসনদের পথেই হাঁটছেন নরেন্দ্র মোদী। পোস্টাল ভোট গোনার পর আপাতত সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখনও ইভিএমে লুকিয়ে আছে সেই রাজটিকা।
এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দেশটির লোকসভার ৫৪৩টি আসনের নির্বাচন সাত ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে কোনো দল বা জোটকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে কমপক্ষে ২৭২টি আসনে জিততে হবে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্বাচন বলে পরিচিত এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০০ কোটি মানুষ ভোটার ছিলেন, যার মধ্যে ৬৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন বলে দেশটির নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে শুরু হয় ভোটগণনা। প্রথমে গোনা শুরু হয় পোস্টাল ব্যালটের ভোট। পোস্টাল ভোট গোনা শেষ হলে তারপর শুরু হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ভোট।
ভোট গণনা শুরুর প্রথম ঘণ্টায় এগিয়ে আছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন দেশটির ক্ষমতাসীন জোট এনডিএ। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা সোয়া ১০টায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এগিয়ে রয়েছে ২৯৯টি আসনে। আর বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট এগিয়ে ২০৫টি আসনে। যদিও প্রতি মুহূর্তেই এর তারতম্য ঘটছে।
এর আগে দেশটির গণমাধ্যমগুলোর যতোগুলো এক্সিট পোল বা বুথ ফেরত জরিপ হয়েছে, তাদের কেউই শাসক দল বিজেপির তৃতীয়বার সরকার গঠন নিয়ে কোনো সংশয় প্রকাশ করেনি। তবে বিজেপি তার ‘ম্যাজিক মার্কে’ পৌঁছাতে যাচ্ছে তার ইঙ্গিত সকাল থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ইভিএমের ভোট গোনা শুরু হলে বের হতে থাকবে মূল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশ
দেশটির লোকসভা নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো উত্তরপ্রদেশ। ৮০ আসনে প্রদেশটি সবসময়ই নির্বাচনে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট রাজ্যের ৮০টি আসনের মধ্যে ৬২টি জিতেছিল। এছাড়া বিএসপি এবং সমাজবাদী পার্টি, তারপরের মিত্ররা যথাক্রমে ১০ এবং পাঁচটি আসন জিতেছিল।
এবার সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেস বিরোধী ভারত ব্লকের সঙ্গে বিএসপি জোট করেছে।
কংগ্রেসের জন্য আমেথি এবং রায়বেরেলি পারিবারিক দুর্গ। কিন্তু গতবার আমেথিতে রাহুল গান্ধী বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে হেরেছিলেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রায়বরেলী এবং ওয়েনাড় এই দুই কেন্দ্রেই এগিয়ে রয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
অমেথি কেন্দ্রে প্রাথমিক প্রবণতায় এগিয়ে বিজেপি প্রার্থী স্মৃতি ইরানি। বারামতি কেন্দ্রে পিছিয়ে পড়েছেন শরদ-কন্যা সুপ্রিয়া সুলে। ওই কেন্দ্রে এগিয়ে অজিত পওয়ারের স্ত্রী সুনেত্রা পওয়ার। গান্ধীনগরে এগিয়ে অমিত শাহ।
এদিকে বুথ ফেরত জরিপগুলো উত্তর প্রদেশে এনডিএ জোটকে এগিয়ে রাখলেও ভারত ব্লকের নেতারা সেই অনুমানগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন।
উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের জন্য গণনা চলছে। প্রাথমিক প্রবণতা অনুসারে, বিজেপি জোট ৩৭টি আসনে এগিয়ে রয়েছে এবং কংগ্রেস জোট এগিয়ে ২৯টি আসনে।
প্রথম এক ঘণ্টার প্রবণতা অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশে ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক এসপি এগিয়ে ২৬টি আসনে, কংগ্রেস এগিয়ে ছয়টি আসনে। অন্যদিকে, বিজেপি এগিয়ে ২২টি আসনে, আরএলডি এগিয়ে একটি আসনে।
মহারাষ্ট্র
অপরদিকে মহারাষ্ট্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে এনডিএ ও ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে। যেখানে বিজেপির থেকে কিছুটা এগিয়ে রয়েছে ভারত জোট।
একনাথ শিন্ডে-অজিত পাওয়ারের বিদ্রোহ; শিবসেনা এবং এনসিপিতে বিভক্তি; এরপরে রাজ্যের নির্বাচনগুলোর একটি পরিবর্তিত রাজনৈতিক দৃশ্যপট তৈরি হয়েছিল।
রাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) এবং বিরোধী ভারত ব্লকের মধ্যে রাজ্যের ৪৮টি লোকসভা আসনের জন্য ভোট গণনা হচ্ছে। সেখানে ভারত জোট বর্তমানে ২৪টি আসনে এগিয়ে আছে, যেখানে এনডিএ এগিয়ে রয়েছে ১৯টিতে।
২০১৯ সালে বিজেপি মহারাষ্ট্রে ২৩টি আসন জিতেছিল। তাদের সাবেক মিত্র শিবসেনা (অবিভক্ত) ১৮টি জিতেছিল। আর তৎকালীন অবিভক্ত এনসিপি চারটি আসন পেয়েছিল, যেখানে কংগ্রেস মাত্র একটি আসনে জেতে।
উত্তরপ্রদেশের ৮০ আসনের পর মহারাষ্ট্র দ্বিতীয় বৃহত্তম দলকে এলএস-এ পাঠায় এবং এখানকার ফলাফল কেন্দ্রে সরকারের আকারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
মহারাষ্ট্রে নীতিন গড়করি, নারায়ণ রানে, পীযূষ গয়াল, ভারতী পাওয়ার, রাওসাহেব দানভে, কপিল পাতিল, নবনীত কৌর-রানা, উজ্জ্বল নিকম, ডা. শ্রীকান্ত শিন্ডে, ছত্রপতি উদয়নরাজে ভোসলে, সুনেত্রা আ. সহ বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী এই রাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আছেন সুনীল তাটকরে এবং অন্যরা।
পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গেও ইন্ডিয়া জোট ও বিজেপি জোটের মধ্যে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। সকাল ৯টার দিকে ইন্ডিয়া জোট ১৭ আসনে এবং বিজেপি জোট ১৬ আসনে এগিয়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গে মোট আসন ৪২টি।
কংগ্রেসে সেঞ্চুরি
২০১৪ সালে ৪৪টি এবং ২০১৯ সালে ৫২টি আসনে জয়ে পর ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কংগ্রেস ১০০টির বেশি আসনে জিততে চলেছে। এর আগে ২০০৯ সালে ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের নেতৃত্বে দলটি পেয়েছিল ২০৬ আসন।
কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ভারত ব্লক গত বছরের জুনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তার বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটকে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকে থামাতে গঠিত হয়েছিল।