বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আনন্দঘন ঈদে মানুষের মনে সুখ নেই, আনন্দ নেই। উচ্চমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তরাও এখন অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা। তারাও কোরবানি করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা কম; যাঁরা আছেন, বেশির ভাগ সরকারি দলের লুটেরা, অবৈধ অর্থের মালিকেরা।
আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। আজকের সংবাদ সম্মেলনে রিজভীর বক্তব্যের বড় অংশজুড়ে ছিল কোরবানির বাজারে পশুসহ নানা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ। এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকারকেই দায়ী করেন রিজভী। তিনি এর পাশাপাশি মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শেয়ারবাজার থেকে আরম্ভ করে পাড়া–মহল্লার কাঁচাবাজার পর্যন্ত প্রতিটি সেক্টরেই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অসহায় সাধারণ জনগণ। লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা, ঈদে খাবার প্রস্তুতে ব্যবহারকৃত মসলা, যেমন এলাচির কেজি ৪ হাজার টাকা, লবঙ্গের কেজি প্রায় ২ হাজার, দারুচিনির কেজি প্রায় ৬০০ টাকা, তেজপাতার কেজি ৩০০ টাকা—জনগণ যেন খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির এক আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছে।’
রিজভী বলেন, দেশের সব কটি ব্যাংক এখন প্রায় দেউলিয়া। শুধু ডলার–সংকটই নয়, ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। এমনকি ঈদের সময়েও ব্যাংকে গিয়ে গ্রাহকেরা চাহিদামতো নগদ পাঁচ হাজার টাকাও তুলতে পারছেন না। ডলার–সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা বিদেশে যেতে পারছেন না। ব্যাংকগুলোকে অনিরাপদ করে তোলা হয়েছে।
সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্ত থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাতায়াতকারী নৌযান লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আজ সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, অরক্ষিত দেশের সীমান্ত। সেন্ট মার্টিন প্রায় অবরুদ্ধ। বাংলাদেশের নাগরিকেরা সেখানে যেতে নিরাপদ বোধ করছে না। সেন্ট মার্টিনকে ঘিরে গত কয়েক দিন মিয়ানমার যা করছে, এটি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য চূড়ান্ত হুমকি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে দীর্ঘদিন থেকেই চরম অস্থিরতা চলছে। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ভারী অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে। যুদ্ধকবলিত মিয়ানমারের জান্তা সেনারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও প্রায়ই ঢুকে পড়ছে। গত সাত থেকে আট বছরেও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে জোর করে ঠেলে দেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একজনকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। মিয়ানমারের ব্যাপারে বাংলাদেশ কী নীতি অবলম্বন করছে, অবশ্যই জনগণের সেটি জানার অধিকার রয়েছে।