কোরবানির ঈদে পশু ও চামড়া কেনাবেচা, মসলার বাজার গতি দেয় দেশের অর্থনীতিতে। প্রাণিসম্পদ খাত এবং অর্থনীতি বিশ্লেষকদের প্রাক্কলনের এবারও ৫০ হাজার কোটি টাকার পশু বাণিজ্যসহ কোরবানি অর্থনীতির আকার হবে কমপক্ষে ৭০ হাজার কোটি টাকা।
তবে চাঁদাবাজি আর সিন্ডিকেট এই বাণিজ্যে বড় ভাগ বসায়।
এবার কুরবানীর বাজারে প্রায় এক কোটি ত্রিশ লাখ পশু সরবরাহের প্রস্তুতি ছিলো সারা দেশে গৃহস্থ কৃষকের গোয়াল আর খামারে। গতবার বিক্রি হয়েছিলো প্রায় এক কোটি পশু
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির প্রাক্কলনে এবার সারাদেশে ৭০ লাখ গরু ও মহিষ কোরবানি হচ্ছে। প্রতিটির দাম গড়ে ৭০ হাজার হলেও মোট মূল্য ৪৯ হাজার কোটি টাকা। খাশি-ভেড়া মিলে এবার দেশে কোরবানির পশুর মোট মূল্য ৫৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে।
তবে কোরবানির পশুর দাম সবটুকু গৃহস্থ ও খামারিদের পকেটে যায় না। পথে পথে চাঁদাবাজ, হাটের দালাল ও সিন্ডিকেট ভাগ নেয়। এদের থামাতে না পারলে কোরবানির বাণিজ্য থেকে অর্থনীতিতে প্রকৃত মূল্য সংযোজন কমে যাবে বলছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।
একাত্তরকে তিনি বলেন, খামারিরা বলছেন ঘাটে ঘাটে পয়সা দিতে হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা টাকা নিয়ে যাচ্ছে। যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এটা ঠেকানোর দায়িত্ব তারাও টাকা নিচ্ছে।
তার মতে, এমন চাঁদাবাজি আর সিন্ডিকেট থামাতে পারলে চামড়া বাণিজ্যে থেকেও প্রকৃত আয় তিনগুণ বাড়ানো সম্ভব।
আবদুল মজিদ বলেন, চামড়া যদি ঠিকমতো সংরক্ষণ করে ফিনিশড প্রডাক্ট হিসেবে রপ্তানি করতে পারি তবে তিন গুণ বৈদেশিক মুদ্রা আসবে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলমের বলছেন, দেশে কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে স্বনির্ভরতা এসেছে মূলত করোনাকালের অভিজ্ঞতাকে পূঁজি করে। তবে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পরও চোরাই পথে আসা পশু এবারও কোরবানির বাজার অস্থির করেছে।
তিনি বলেন, অফিশিয়াল অথবা আনঅফিশিয়াল বিদেশি পশুর আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা দরকার। যেখানে আমাদের উৎপাদন উদ্বৃত্ত সেখানে যদি আমদানি করে দাম কমিয়ে দিই তাহলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দেশের অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদের খাতের অবদান প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। পশু, মশলা ও সংশ্লিষ্ট সবকিছুর বাণিজ্য নিয়ে কোরবানির অর্থনীতির আকারও ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে টাকার অংকের সাথে প্রকৃত মূল্য-সংযোজনই বেশি মূল্যবান।