হামবুর্গের মহারণ শেষে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে জড়িয়ে ধরে শিশুর মতো কাঁদলেন পেপে। পর্তুগালের জার্সিতে প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে আর মাঠে নামা হবে না এটা ভেবেই হয়তো আবেগ ছুঁয়ে গেল তাকে। দলের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার বহিঃপ্রকাশও হতে পারে এটা। রোনালদো অবশ্য আগের ম্যাচের মতো কাঁদলেন না।
নির্জন নদীর মতো বয়ে চললেন ‘সিআর সেভেন’। এক পা, দু পা করে এগোতে থাকলেন টানেলের দিকে। তার গতি কিছুটা রোধ করে সান্ত্বনা দিলেন প্রধান কোচ রবার্তো মার্টিনেজ। বেলজিয়ান কোচ অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার পেপের অঝর শ্রাবণ থামানোরও বৃথা চেষ্টা করলেন। মাঠ, টানেল কিংবা গ্যালারি সবখানেই তিনি দেখলেন লাল-সবুজের হতাশা।
শুক্রবার (৫ জুলাই) দিবাগত রাতের ম্যাচে পর্তুগাল আর ফ্রান্স ছাপিয়ে লড়াইটা যেন হয়ে উঠেছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আর কিলিয়ান এমবাপ্পের। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের বড় দুই তারকা নিজেদের মেলে ধরতে পারলেন না। দুজনই ছিলেন ভীষণ নিষ্প্রভ।
তাই বলে অবশ্য ম্যাচের উত্তেজনা কম ছিল না। ইউরো কাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলো ১২০ মিনিট। তাতেও হলো না গোল। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
সেই টাইব্রেকার ভাগ্যে পর্তুগালকে ৫-৩ ব্যবধানে হারিয়েছে ফ্রান্স। এতে বিদায় হয়ে গেছে রোনালদোদের, এমবাপের ফ্রান্স নাম লিখিয়েছে ইউরো কাপের সেমিফাইনালে।
ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ানোর পর পর্তুগালের বড় ভরসা ছিলেন গোলকিপার দিয়েগো কস্তা, যিনি আগের ম্যাচে স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে তিনটি সেভ করেছিলেন। তবে এ যাত্রায় কস্তা একটি সেভও করতে পারেননি। টাইব্রেকার শট সেভ করতে পারেননি ফ্রান্সের মাইক মেইগনানও। তবে জোয়াও ফেলিক্সের নেওয়া পর্তুগালের চতুর্থ শট পোস্টে লেগে মিস হলে সেটিই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়।
এদিন খেলার শুরুতে তেমন একটা আক্রমণ করতে দেখা যায়নি কোনো দলকেই। প্রথমার্ধে বলার মতো কোনো সুযোগও তৈরি করতে পারেনি কোনো দল। ফলে প্রথমার্ধ শেষ হয় সমতায়। প্রথমার্ধে ৫৬ শতাংশ বল দখলে রেখে ফ্রান্সের পোস্টে শট নেয় মাত্র দুটি, যার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল না কোনোটিই। অন্যদিকে ৪৪ শতাংশ বল দখলে রেখে ফ্রান্সের শট ছিল মাত্র ৩টি। যার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল মাত্র একটি।
ম্যাচের শুরুটা ছিল সাদামাটা। দুই দলই খেলতে থাকে ছন্নছাড়া ফুটবল। ২০ মিনিটের মাথায় প্রথম শট নেয় ফ্রান্স। বক্সের বাইরে থেকে থিও হার্নান্দেজের শট আটকে দেয় গোলরক্ষক কস্তা। ২৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে এদোয়ার্দো কামাভিঙ্গার শট চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে। ৪২ মিনিটে বক্সের কাছ থেকে ব্রুনো ফার্নান্দেজের ফ্রি কিক চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে দুই দলই। ৫০ মিনিটে আক্রমণে ওঠে ফ্রান্স। বল নিয়ে একাই দৌঁড় দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তবে তার সহজ শটটি ঠেকিয়ে দেন পর্তুগালের গোলরক্ষক কস্তা। ৬১ মিনিটে ভাল একটি শট নেন জোয়াও ক্যানসালো। তবে তার শটটি দারুণভাবে ঠেকিয়ে দেন ফ্রান্সের গোলরক্ষক মাইগনান।
দুই মিনিট পর আবারও ফ্রান্সের ডেরায় হানা দেয় পর্তুগাল। রাফায়েল লিওর বাঁ পাশ থেকে ক্রস করা বলটি ফ্রান্সের জালে জড়াতে ব্যর্থ হন ভিতিনহা। ৭০ মিনিটে পর্তুগালের ডেরায় আক্রমণ চালায় ফ্রান্স। তবে সে যাত্রায় ব্যর্থ হন কামাভিঙ্গা। দ্বিতীয়ার্ধে এভাবেই একের পর চেষ্টা চালিয়েও গোলের দেখা পায়নি দুই দল। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়। যে কারণে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়েও একের পর আক্রমণ চালাতে থাকে দুই দলই। তবে গোল পায়নি কোনো দলই। যার ফলে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধও শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়। দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিপক্ষের ডেরায় আক্রমণ অব্যাহত রাখে দুই দল। তবে অতিরিক্ত সময়েও বারবার চেষ্টা চালিয়ে কোনো গোলের দেখা পায়নি কোনো দল। যে কারণে ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে প্রথম শটটি নিতে আসেন দেম্বেলে। প্রথম শটেই লক্ষ্যভেদ করেন এই ফুটবলার। পর্তুগালের হয়ে প্রথম শটেই লক্ষ্যভেদ করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ফ্রান্সের হয়ে দ্বিতীয় শটে গোল করেন ফোফানা। দ্বিতীয় শটে গোল করেন পর্তুগালের বের্নার্দো সিলভা। পর্তুগিজ গোলরক্ষককে পরাস্ত করে তৃতীয় গোলটি করেন কুন্দে। পর্তুগালের হয়ে তৃতীয় শট নিতে আসেন জোয়াও ফেলিক্স। তার শটটি পোস্টে লেগে ফিরে আসে। দলের হয়ে চতুর্থ পেনাল্টিতে গোল করেন বারকোলা। তবে পরের শটে গোল করেন পর্তুগালের নুনো মেন্দেস। পঞ্চম শটে হার্নান্দেজ লক্ষ্যভেদ করলে উল্লাসে মেতে ওঠে ফ্রান্স। টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলের জয় পেয়ে সেমিতে পা রাখে ফরাসিরা।