ব্রিটেনের রাজনীতিতে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা লেবার পার্টির তরুণ তুর্কি এবং বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক এবার দেশটির নগর বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স এবং ব্লুমবার্গ। মঙ্গলবার আলাদা প্রতিবেদনে একথা জানিয়েছে তারা।
যুক্তরাজ্যের নগরমন্ত্রী হিসেবে তিনি আর্থিক সেবা খাতেরও তত্ত্বাবধান করবেন। টিউলিপ সিদ্দিক আগের কনজারভেটিভ সরকারের অধীনে এইচএসবিসির সাবেক ব্যাংকার বিম আফোলামির স্থলাভিষিক্ত হবেন। একই সঙ্গে ব্রিটেনের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন টিউলিপ সিদ্দিক।
প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, মন্ত্রী হিসেবে তার নিয়োগের বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। লেবার পার্টি বিরোধী দলে থাকার সময় টিউলিপ এই পদে ছায়া মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এবার চতুর্থবারের মতো ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ২৩ হাজার ৪৩২ ভোট পেয়ে টানা চতুর্থবার এমপি নির্বাচিত হন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রক্ষণশীল দলের ডন উইলিয়ামস পান ৮ হাজার ৪৬২ ভোট। ২০২১ সাল থেকে লন্ডনের সিটি অফ ফিনান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্টের আর্থিক সেবার জন্য নীতিমালা তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন টিউলিপ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা নিজের কন্যা ব্রিটেনের টানা চারবারের নির্বাচিত এমপি ও মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার মেয়ে রাজনীতিতে তার জীবনটাকে উৎসর্গ করেছে। সবার কাছে তার জন্য দোয়া চাই’।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের লেবার পার্টির নেতা হওয়ার প্রার্থীতার জন্য কমপক্ষে ২২ জন দলীয় এমপির সমর্থনের প্রয়োজন ছিল। সে সময় প্রথমদিকে স্টারমারকে মনোনীত করা কয়েকজনের অন্যতম ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক।
কিয়ার স্টারমার শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের এপ্রিলে এ লড়াইয়ে জয়ী হন এবং এর চার বছরের মাথায় তিনি লেবার পার্টিকে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনলেন। স্যার কিয়ার স্টারমার এবং টিউলিপ সিদ্দিক প্রায় এক দশক ধরে ঘনিষ্ঠ দলীয় সহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন।
টানা চতুর্থবার বিজয়ী হবার পর টিউলিপ পুরোনো স্মৃতিচারণ করতে ভোলেননি। তিনি জানান, হেইট স্পিচের শিকার হওয়ার পর কিয়ার স্টারমারই তাকে প্রথম ফোন করেছিলেন। তাদের সহকর্মী জো কক্স ২০১৬ সালের জুনে যখন খুন হন, তখনো স্টারমার থেকে সবার আগে ফোন পেয়েছিলেন টিউলিপ।
টিউলিপের এলাকার স্থানীয় ওয়েবসাইট হ্যামঅ্যান্ডহাই টিউলিপকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, টিউলিপ অসুস্থ হওয়ার সময়ও তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেন, আপনি যে পরিবর্তন চেয়েছিলেন, তার জন্য ভোট দিয়েছেন। এমন একজন নেতাকে ভোট দিয়েছেন যিনি সহানুভূতিশীল এবং দয়ালু।
তৎকালীন হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন এবং বর্তমানে হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের এমপি ৪১ বছর বয়সী টিউলিপকে লেবার পার্টির অভ্যন্তরে নতুন প্রজন্মের তুমুল সম্ভাবনাময় রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখেন দেশটির রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপের তেজস্বী ভাষণ ও নেতৃত্ব গুণও প্রশংষা কুড়িয়েছে।
লেবার পার্টির নিরাপদ আসন নয়, তবুও ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রথমবার লেবারের মনোনয়ন পেয়েই তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে চমকের সৃষ্টি করেন টিউলিপ। এরপর আর তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। টানা জয় নিয়েই রাজ করছেন নিজের আসন। সেই সঙ্গে লেবার পার্টিকে আরও শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখছেন।
২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য ২০২৩ সালে হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন নির্বাচনি এলাকার স্থলে হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৫ সাল থেকেই এ আসন ধরে রেখেছেন লেবারের টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বলেন, হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের প্রতিনিধিত্ব করা তার ‘জীবনের সম্মান’।
চলতি বছর মে’তে টিউলিপ ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানান, ব্রিটেনের শ্রম বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করতে এবং এর বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করতে তিনি আরও বেশি কাজ করবেন। গৃহায়ণ ও অবকাঠামো প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং বিনিয়োগ আকর্ষণেও কাজ করার কথা জানিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক।