জনমনে স্বস্তি না ফেরা পর্যন্ত কারফিউ চলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আপনারাই যখন বলবেন, আমরা স্বস্তি অনুভব করছি, তখনই কারফিউ প্রত্যাহার করা হবে। সম্প্রতি কোটা আন্দোলন চলাকালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত তিন পুলিশ সদস্য ও এক আনসার সদস্যের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এসময় সরকারের পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা নগদ ও ৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা অপরাধীদের একে একে চিহ্নিত করবো। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্য হয়েই কারফিউ দিয়েছি। এই জঙ্গি উত্থান ও সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আশা করছি। সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিহতদের স্বজনদের উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা কখনও একা অনুভব করবেন না। আপনাদের পাশে সরকার আছে, দেশ আছে। আপনাদের যে কোনো সহযোগিতার জন্য সরকার প্রস্তুত আছে। আমি শিগগিরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আপনাদের সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের নামে কারা পেছন থেকে মদদ দিয়েছে আপনারা সেটা জানেন। এটা সেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। বাংলাদেশকে একটা অকার্যকর দেশে পরিণত করার জন্য যারা ইন্ধন দিয়েছে তারা ছাত্রদের বাদ দিয়ে নিজেরাই সামনে নেমে এসেছিলো। আন্দোলনকারীদের সবগুলো দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি পুলিশকে টার্গেট করে তারা হামলা চালিয়েছে। পুলিশ সদস্যকে মেরে ফাঁসি দিয়ে গাছে টানিয়ে রেখেছে। এ চিত্র আপনারা দেখেছেন। আপনারা দেখেছেন বাংলা ভাই যে জঙ্গিবাদের উত্থান করেছিলো, এই জামায়াত-বিএনপিও একই কাজ করেছে। মন্ত্রী বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতাকারীদের সর্বশক্তি দিয়ে চিহ্নিত করে আইনের মুখোমুখি করা হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কারফিউ তুলে দিতে সরকার কাজ করছে। সহিংসতায় জড়িত এবং নাশকতাকারীদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে তাদের একের পর এক চিহ্নিত করবো। তাদের আইনের মুখোমুখি করা হবে। এটা থেকে আমরা এক পা-ও সরে দাঁড়াবো না। তিনি বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে কারফিউ জারি করেছি। আমরা সেনাবাহিনীকে ডেকেছি। তারা সহযোগিতা করছে। এই জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের উত্থান, বিএনপি-জামায়াতের চক্রান্ত ইতোমধ্যে আমরা কন্ট্রোল করে নিয়ে এসেছি। আগামী দু-চার দিনের মধ্যে আশা করি সবকিছু কন্ট্রোল করে নিয়ে আসবো। কারণ দেশের মানুষ এটা পছন্দ করছে না। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী কিংবা সাধারণ জনগণ কতজন মারা গেছেন জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনসাধারণ কতজন মারা গেছেন, তার কোনো হিসাব আমাদের কাছে নেই। কোনো থানায় এ সংক্রান্ত কোনো মামলাও দায়ের হয়নি। পুলিশ তথ্য সংগ্রহ করছে, এ বিষয়ে পরে বলা যাবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করেছেন, তাদের কয়েকজনকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নাই। তাদের পরিবার থেকেও আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। তারা অভিযোগ করলে আমরা আপনাদের জানাতে পারবো। এরইমধ্যে আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় বেশ কিছু মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগে চার্জশিট দায়ের হোক। মামলার মেরিট দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।