বন্যাদুর্গত এলাকায় পানিবন্দি মানুষদের নগদ টাকা, চাল ও শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী টিম জেলায় জেলায় উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামী ৪৮ ঘন্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বন্যা আক্রান্ত জেলাসমূহের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গত ২০ আগস্ট ২০২৪ তারিখ থেকে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য:
– বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ৬টি (কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার);
– ৪৩ উপজেলা বন্যা প্লাবিত;
– ৬ জেলায় মোট ১,৮৯,৬৬৩টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
– ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১৭,৯৬,২৪৮ জন।
– বন্যার পানিতে ডুবে ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় ১ (এক) জনের মৃত্যু হয়েছে।
– পানিবন্দি/ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের মোট ১,৩৫৯ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট ১৭,৮৮২ জন লোক এবং ৩,৪৮৬টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
– জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মোট ৩০৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে বরাদ্দকৃত ত্রাণ সামগ্রীর বিবরণ:
বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসককে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় করে এক সাথে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নাম্বারটি চালু রয়েছে।
ফেনী জেলায় বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ৪০টি উদ্ধারকারী যান ফেনী জেলায় প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য ও ৮টি উদ্ধারকারী যান কাজ করছে। এছাড়া বিজিবিসহ আরও নৌযান আনানো হচ্ছে।
বন্যা সম্পর্কিত জেলাভিত্তিক তথ্য:
ফেনী
বন্যায় ফেনী জেলার ৬টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
– পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ;
– বন্যার পানিতে ডুবে ১(এক) জনের মৃত্যু;
– আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ৭৮টি;
– আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ২০,০০০ জন;
– মেডিকেল টিম চালু ৭৬ টি;
– দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ টাকা ৪২,০০,০০০/-, ত্রাণ কার্য (চাল) ১,৪০০ মেঃটন ও শুকনা খাবার ৩,০০০ প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা
বন্যায় কুমিল্লা জেলার ১১টি উপজেলার ৬৪টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
– দুর্যোগ কবলিত জনসংখ্যা ৪৭,৭৭০ জন;
– আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৮৭টি;
– আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ৩৯২ জন;
– দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ টাকা ২৫,০০,০০০/-, ত্রাণ কার্য (চাল) ১,৬০০ মেঃটন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালী
বন্যায় নোয়াখালী জেলার ৮টি উপজেলার ৮৬টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
– পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১,২১,২০০ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১২,০২,০০০ জন;
– আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ৩৪৫টি;
– আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ৭,৭৫৩ জন ও আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা ১৭৯৫টি;
– মেডিকেল টিম চালু ৮৮টি;
– দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ টাকা ২৫,০০,০০০/-, ত্রাণ কার্য (চাল) ১,৬০০ মেঃটন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে
চট্টগ্রাম
বন্যায় চট্টগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
– পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ২০,১৭৫ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৯৫,৯০০ জন;
– আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ২৩২টি;
– আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও কেউ আশ্রয় গ্রহণ করেনি;
– মেডিকেল টিম চালু ১২৭ টি;
– দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ টাকা ১৫,০০,০০০/-, ত্রাণ কার্য (চাল) ১,৬০০ মেঃটন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মৌলভীবাজার
বন্যায় মৌলভীবাজার জেলার ৬টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
– পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১২,৯৬৬ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৬১,৬৬০ জন;
– দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ টাকা ১০,০০,০০০/-, ত্রাণ কার্য (চাল) ১,৮৫০ মেঃটন ও শুকনা খাবার ১,০০০ প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
খাগড়াছড়ি
বন্যায় খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
– পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১৫,৪২২ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৮৭,৭১৮ জন;
– আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ১১৭টি;
– আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারীর সংখ্যা ৭,২৭৭ জন এবং আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা ১,৬৯১টি;
– মেডিকেল টিম চালু ১৮ টি;
– দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে ত্রাণ কার্য (চাল) ৮০০ মেঃটন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।