শুক্রবার , ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. London Mirror Specials
  2. অন্যান্য
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জেলার খবর
  9. ঢাকা
  10. তথ্য-প্রযুক্তি
  11. প্রবাসের কথা
  12. বরিশাল
  13. বাংলাদেশ
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

পাকিস্তানে জোরালো হচ্ছে ইমরান খানের মুক্তির দাবি

প্রতিবেদক
Newsdesk
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪ ২:১১ অপরাহ্ণ

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসান (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানের মুক্তিএবং গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে উত্তাল দেশটির পরিস্থিতি। রাজধানী ঘেরাও কর্মসূচিকে ঘিরে গেলো কয়েক সপ্তাহ ধরে কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসলামাবাদের চারপাশের রাস্তাগুলো শিপিং কনটেইনার সারিবদ্ধ হয়ে আছে; যাতে কোনো প্রতিবাদের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে সড়ক বন্ধ করে দেয়া সম্ভব।

পাকিন্তানের রাজধানীবাসীও এমন পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন।  কোন ধরনের অশান্তির খবর মাত্র কর্তৃপক্ষ ইসলামাবাদ সিল করে দিয়ে আসছে। ফলে ইসলামাবাদের বসিন্দারা আর বিষয়টির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন।  তারা জানেন, বিরোধী দল কোন কর্মসূচি দেয়া মাত্রই রাজধানীকে অবরুদ্ধ করে ফেলা হবে। ফলে, এখন আর তাদের কাছে সরকারের এই ধরনের নিবারণমূলক ব্যবস্থা আর কোন আলোচ্য বিষয় নয়।

গত রবিবার কন্টেইনারগুলো দিয়ে ইসলামাবাদ শহরের চারপাশে ২৯টি রুট অবরোধ করে রাখা হয়। একটি বহুল প্রচারিত এবং প্রত্যাশিত রাজনৈতিক সমাবেশকে ঘিরে এই ব্যবস্থা নেয় শহর কর্তৃপক্ষ। ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থকরা তাদের হাজার হাজার কর্মী ও সমর্থককে ‘ইসলামাবাদ চলো’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন।  ইসলামবাদের বাইরেই বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছিলো।

সে সময় কন্টেইনারগুলো পিটিআই নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সামনে কোন বাধাই গড়ে তুলছে পারেনি। বরং সামাজিক মাধ্যমকে ছড়িয়ে পরা বিভিন্ন ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, প্রতিবাদকারীরা কন্টেইনারগুলো উপেক্ষা করেই সমাবেশের জন্য নির্ধারিত স্থানে জড়ো হয়। জনতা পতাকা ও ব্যানার ছেড়ে গিয়েছিলো সেই সমাবেশ। অনেকের মুখে ছিলো ইমরান খানের মাস্ক পরা। মুখে ছিলো ‘ইমরান খান জিন্দাবাদ’ স্লোগান।

সমাবেশ যার মুখ সর্বত্র ছিল, তিনি নিজেই উপস্থিত ছিলেন না।  কারণম দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁস করার অভিযোগে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন ইমরান খান।মিস্টার খান তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। উচ্চ আদালত থেকে জামিন এবং জাতিসংঘের আহবানের পরও শাহবাজ সরকার ইমরান খানকে মুক্তি দিচ্ছে না।

imran_2

বেশিরভাগ বিশ্লেষক বলছেন যে, পাকিস্তানের রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে স্পষ্টভাবে নির্দেশনা ছাড়া কিং খানকে ছাড় দেওয়া হবে না।  এরপরও পিটিআই নেতারা দমে যেতে নারাজ। তারা বলছেন, প্রয়োচনে জেলের তালা ভেঙ্গে তাদের নেতা ইমরান খানকে বের করে আনা হবে।  রোববার সমাবেশ থেকে পিটিআই নেতাদের অনেকেই তাদের জ্বালাময়ী ভাষণে এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।

খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গন্ডাপুর মঞ্চ থেকে ডেকে উঠেন, শোন পাকিস্তানিরা, যদি এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ইমরানকে বৈধভাবে মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে আমি আল্লাহে নামে শপথ করে বলছি, আমরা নিজেরাই ইমরান খানকে মুক্তি দেব। আপনি কি প্রস্তুত? এ সময় পিটিআই সমর্থকরা ইমরান খানের মুক্তির দাবিবে স্লোগান তুলেন। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে সমাবেশস্থল।

সমাবেশের পর প্রতিক্রিয়া দ্রুত এসেছিল। পরের দিন সন্ধ্যায়, সমাজিক ও গণমাধ্যমে বিরোধীদের ওপর দমন অভিযান শুরুর খবর আসতে শুরু করে। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ফুটেজে দেখা গেছে, পার্টির চেয়ারম্যান ও এমপি গহর আলি খান ভবন থেকে বের হচ্ছেন, পুলিশ তার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে, ক্যামেরা এবং মোবাইল ফোন তার চারপাশে ঘোরাফেরা করছে।

জাতীয় পরিষদের আরেক সদস্য শোয়েব শাহীনের অফিসের ভেতরে ধারণ করা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বেশ কিছু লোক দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ে তাকে দ্রুত ঘর থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। তবে ঠিক কাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা নিয়ে বিভ্রান্তি। পুলিশ বিবিসিকে তিনজন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও পিটিআই দাবি করেছে কমপক্ষে দশজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে গহরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

শুরু থেকেই অনুমান করা হয়েছিল, এই গ্রেপ্তারগুলো নতুন এক আইনের আওতায় করা হচ্ছে।  এই আইনটি গত সপ্তাহেই জারি করা হয়, যাকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকারের উপর আরেকটি আক্রমণ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিলো। নতুন আইনে জনসমাগমকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে এবং ‘অবৈধ’ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের জন্য তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

imran_3

সরকারের দমনপীড়নের ঘটনাটি ছিলো ইমরান খানের পিটিআই এবং কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিড়াল এবং ইঁদুরের দীর্ঘ খেলার সর্বশেষ উদাহরণ। তাহলে পাকিস্তানের জন্য এই ক্ষমতার লড়াইয়ের মানে কী?

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টার থিঙ্ক ট্যাঙ্কের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, এটি এক বিপজ্জনক বিভ্রান্তি। কিন্তু সবচেয়ে খারাপ, এটি এমন কিছু হতে পারে যা দেশকে আরও বেশি অস্থিতিশীল করে তোলে। এটি পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাকে আরও কঠিন করে তুলবে। পাকিস্তান এখনও তার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

কুগেলম্যান যুক্তি দেন যে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী, পিটিআইয়ের উপর ক্র্যাকডাউনের পেছনে চালিকা শক্তি বলে মনে করা হয়, একটি পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে লড়াই করার চেষ্টা করছে। অনেক বছর ধরে সেনাবাহিনী ভিন্নমতের সাথে তার পথ চালিয়েছে। এই ক্র্যাকডাউনের মাধ্যমে সেটি ছিন্ন হয়ে গেছে।  এবং পিটিআই সামাজিক মাধ্যমে রাজনীতিকে পরিচালনা করার কৌশল রপ্ত করে ফেলেছে।

কুগেলম্যান বিষয়টিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য বড় মাথাব্যাথার কারণ হিসাবে মনে করেন।  তিনি বলেন, পিটিআই সফলভাবে সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে আন্দোলন বেগবান করতে পেরেছে, যা দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। ‘অবৈধ’ সমাবেশ আইন এবং সংসদ থেকে আইন প্রণেতাদের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল অধিকারকর্মীদের দ্বারাও সমালোচিত হয়েছে।

ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স পাকিস্তানে ভিপিএন ছাড়া কাজ করেনি। সামরিক বাহিনী বারবার ‘সাইবার সন্ত্রাস’ নিয়ে স্বর উচুঁ করেছে এবং সরকার সম্প্রতি বলেছে যে, এটি একটি অনলাইন ফায়ারওয়াল তৈরি করছে। ফায়ারওয়াল কীভাবে বাকস্বাধীনতা সীমিত করতে পারে, সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে একজন মন্ত্রী বলেছিলেন, এটি কিছুতেই বাধা দেবে না।

imran_4

এটিকে পিটিআইয়ের সোশ্যাল মিডিয়া মেশিনকে সীমিত করার চেষ্টা হিসাবেও দেখছেন অনেকে।  সংঘর্ষ যত দীর্ঘ হবে, পাকিস্তানের জন্য তা আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। লাহোর-ভিত্তিক রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং সাংবাদিক মেহমাল সরফরাজ যেমন বলেছেন, যখন রাজনৈতিক দলগুলো লড়াই করে, তখন তৃতীয় শক্তি সুবিধা নেয়।

অনেক বিশ্লেষকের মতে, সেই তৃতীয় শক্তি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যা দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তবে সামরিক বাহিনী যে মাত্রায় বেসামরিক সরকারগুলোকে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুমতি দিয়েছে, তা হ্রাস পেয়েছে এবং ক্ষয় হয়েছে।  তবে আজও অনেক বিশ্লেষক দেশটির অনেক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও বিধিনিষেধের পেছনে সেনাবাহিনীর হাত দেখেন।

মিসেস সাফরাজ বলেন, যদি না রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের সাথে কথা বলে, এই হাইব্রিড শাসন ক্রমেই শক্তি অর্জন করতে থাকবে, হাইব্রিড তখন আরো স্থায়ী হতে পারে। ইমরান খান অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তিনি এবং তাঁর দলের অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলার কোনো আগ্রহ নেই। কারণ পিটিআই মনে করে তারা জনপ্রিয় এবং সবাইকে একত্রিত করতে সক্ষম। চাপের কাছে মাথা নত করবে না।

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক