রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের অর্থপাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এরি মধ্যে আর ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১০০০ কোটি টাকা) পাচারের অভিযোগে সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জনের নামে ১৭টি মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এছাড়াও ৩৩ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ তদন্ত চলছে।
বুধবার পুলিশের সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশ বলছে, অর্থ পাচারে সালমানের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তার ভাই সোহেল রহমান। এছাড়া সালমানের ছেলে সায়ান এফ রহমান এবং সোহেলের ছেলে শাহরিয়ার রহমানও বিদেশে অর্থপাচার চক্রের অন্যতম হোতা বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। তার ভাই সোহেল রহমান চেয়ারম্যান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ছিলেন সালমান। তখন তিনি দেশের আর্থিক খাতের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে উঠেছিলেন।
পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিআইডির অনুসন্ধানে সালমান এফ রহমান, তার ভাই এএসএফ রহমান এবং স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠান ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের দিলকুশার লোকাল অফিস থেকে ৯৩টি এলসি/সেলস কন্ট্রাক্টের বিপরীতে পণ্য রপ্তানি করে।
‘তবে নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও রপ্তানিমূল্য প্রায় ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০০০ কোটি টাকা) বাংলাদেশে না আনায় বিদেশে পাচারের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৭টি কোম্পানির প্রায় ১০০০ কোটি টাকা মূল্যমানের পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। রপ্তানিমূল্য চার মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন করার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও তা না করে সালমান এফ রহমানসহ বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যান্য স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক ওই অর্থ বিদেশে পাচার করার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
‘বিদেশে রপ্তানি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমানের পুত্র আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং এ এস এফ রহমানের পুত্র আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের যৌথ মালিকানার আরআর গ্লোবাল (এফজেডই) শারজাহ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের ঠিকানায় রপ্তানি করা হয়েছে। এ ছাড়া জার্মানি, নেদারল্যান্ড, ইউকে, তুরস্ক, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশেও রপ্তানির মাধ্যমে মূল্য বাংলাদেশে না এনে এই আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে বিদেশে পাচার করেছেন,’ বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
পুলিশ বলছে, আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে টাকা পাচারের অসদুদ্দেশ্যে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পণ্য রপ্তানি করে ইচ্ছাকৃতভাবে রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবাসন না করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের দণ্ডনীয় অপরাধ করেছে। সালমান এফ রহমান এবং তার সহযোগীরা ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সহযোগিতায় বিদেশে অর্থপাচার করেছে বলেও সিআইডির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসায় মতিঝিল থানায় ১৭টি মামলা হয়েছে।
এ ছাড়া সালমান এফ রহমান এবং বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ও বেনামে প্রায় ৩৩,৪৭০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণপূর্বক বিদেশে পাচার এবং অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে পৃথক অনুসন্ধান কার্যক্রম ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম, সিআইডি-তে চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
যে ১৭ কোম্পানির রপ্তানির মাধ্যমে ৮৩ মিলিয়ন ডলার পাচারের তথ্য নিশ্চিত হয়েছে সিআইডি, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. অ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস লিমিটেড, ২. অ্যাপোলো অ্যাপারেলস লিমিটেড, ৩. অটাম লুপ অ্যাপারেলস লিমিটেড, ৪. বেক্সটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেড, ৫. কসমোপলিটান অ্যাপারেলস লিমিটেড, ৬. কোজি অ্যাপারেলস লিমিটেড, ৭. এসেস ফ্যাশন লিমিটেড, ৮. ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেড।
৯. কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেড, ১০. মিডওয়েস্ট গার্মেন্টস লিমিটেড, ১১. পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেড, ১২. পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস লিমিটেড, ১৩. প্ল্যাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেড, ১৪. স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেড, ১৫. স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস লিমিটেড, ১৬. আরবান ফ্যাশনস লিমিটেড ও ১৭. উইন্টার স্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড।