রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, সংবিধান সংশোধন, বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধসহ মোট পাঁচ দফা নতুন দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হলে শিগগিরই রাজপথে কঠোর কর্মসূচিরও ঘোষণা দিয়েছে ছাত্র সংগঠনটি।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেওয়ায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এসব দাবি তোলা হয়। কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, এই শহীদ মিনার থেকেই ছাত্রদের আন্দোলনের শুরু হয়েছে। তার দুই দিনের মাথায় শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়েছে। রাষ্ট্রপতি দ্রুত পদত্যাগ না করলে বঙ্গভবন ঘেরাও করে তাকেও হাসিনার মতো পালাতে বাধ্য করা হবে। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধের দাবি জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার সময় শেষ হয়ে গেছে। ছাত্র-জনতা আর আপনাকে রাষ্ট্রপতি পদে দেখতে চায় না। ছাত্র-জনতার এই স্পিরিট নতুন বাংলাদেশ গঠনের আগ পর্যন্ত থাকবে। ৭২ এর ফ্যাসিবাদী সংবিধান বাতিল করে সংবিধান নতুন সংবিধান প্রণয়নের আগ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো।
এসময় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সরাজিস আলম বলেন, শেখ হাসিনার দোসররা গর্ত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রযোজনে আবারও ছাত্র-জনতা মাঠে নামবে।
দাবিগুলো হলো-
- অনতিবিলম্বে ৭২ এর সংবিধান বাতিল করতে হবে। সে জায়গায় ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পক্ষ থেকে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে।
- এই সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তাদের আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
- এই সপ্তাহের মধ্যে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দীনকে পদচ্যুত করতে হবে।
- জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের আলোকে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
- ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এসব নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছিল তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। একই সাথে তারা যেন ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক হতে না পারে ও নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ছাত্রদের সংগঠন ও রক্তিম জুলাই ২৪ এর কর্মীরা। অবস্থান কর্মসূচি থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বঙ্গভবনের সামনে রাত্রিযাপনের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
একই দিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বঙ্গভবনের সামনে থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
এসময় আন্দোলনকারীরা বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার দোসর। আমরা চাই না তিনি রাষ্ট্রপতি পদে থাকুন। তাই আমরা তাকে পদত্যাগ করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। না করলে আমরা জানি তাকে কীভাবে পথ থেকে সরাতে হয়।
বঙ্গভবন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গভবন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ডিএমপি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। অপ্রীতিকর কিছু যাতে না ঘটে সেজন্য স্থানীয় থানা পুলিশের পাশাপাশি সেখানে সহযোগিতায় রয়েছেন সেনাবাহিনী ও র্যাবের সদস্যরা।