গেলো সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়া দেশটির বামপন্থি মার্ক্সবাদী নেতা অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে দেশটির সংস্কার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজের ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে নিলেন। এবার শ্রীলঙ্কায় আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনে তার জোট ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) ভূমিধস জয় পেয়েছে। বিধানসভার ২২৫ আসনের মধ্যে জোটটি ১৫৯টি আসনে জয়লাভ করেছে।
এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্স জানিয়েছে, দেশটির নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে থাকা ফলের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী দিশানায়েকের জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। এনপিপি প্রায় ৬২ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অন্যদিকে এনপিপি জোটের প্রধান প্রতিপক্ষ সমাগি জনা বালাবেগায়া ৩৫ আসনে জয় পেয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে এনপিপির আসনসংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। গত সেপ্টেম্বরে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন অনূঢ়া। কিন্তু তখন পার্লামেন্টে তাঁর নির্বাচনী জোট এনপিপির আসন ছিল মাত্র তিনটি। তাই পার্লামেন্টে নিজ জোটের আসনসংখ্যা বাড়াতে তিনি আগাম নির্বাচন দেন।
শ্রীলঙ্কায় আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার। পার্লামেন্টের আসনসংখ্যা ২২৫। এর মধ্যে ১৯৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। বাকি ২৯টি ‘জাতীয়ভিত্তিক আসন’। রাজনৈতিক দলগুলো পাবে ১৯৬ আসনে প্রাপ্ত ভোটের হিস্যা অনুযায়ী। ভূমিধস জয়ের কারণে দিশানায়েকের জোট এসব আসন পাবে।
শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া প্রাথমিক ফলাফলে বিশ্লেষণে ধারণা করা হচ্ছে, অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টির জন্য দায়ী দলগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে এনপিপিকে বেছে নেন ভোটাররা। এর আগে দেশটির জনতা বামপন্থি মার্ক্সবাদী নেতা দিশানায়েকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নেয়।
নির্বাচনের আগে তিনি দুর্নীতি, দেশ থেকে চুরি যাওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু দুই বছর পর অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেশটির জনগণের ওপর ব্যাপক ভোগান্তি তৈরি হয়। এরপর প্রেসিডেন্ট অনুঢ়া তার সমর্থন জোরদার করার জন্য আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
নির্বাচনে এনপিপি সমর্থক আইটি পেশাজীবী চানাকা রাজাপক্ষ শুক্রবার বলেন, দুর্নীতি ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ ভোট দিয়েছে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেন থেকে শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতা লাভের পর প্রথমবার তামিল অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলীয় জেলা জাফনাতে এনপিপি সবচেয়ে বেশি ভোটে জয়লাভ করে।
৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে বলেন, আমি আশা করেছিলাম, এবারের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে ভোট পাব। একটি শক্তিশালী পার্লামেন্ট গঠনের জন্য এবারের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শ্রীলঙ্কার জনগণের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন এসেছে, যার শুরু গেলো সেপ্টেম্বরে। নির্বাচনে জয়লাভ করে এনপিপি সংসদে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।