বিশ্ববিখ্যাত আন্তঃশাস্ত্রীয় বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারের বর্ষসেরা ১০ ব্যক্তিত্বের তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ তালিকায় তিনি সাত নম্বরে রয়েছেন।
সোমবার নেচারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ড. ইউনূসকে ‘নেশন বিল্ডার’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে কীভাবে গবেষকেরা আমাদের পৃথিবীকে গড়ছেন, তার স্বীকৃতি এই তালিকা। চলতি বছরের তালিকায় আবহাওয়া পূর্বাভাসের নতুন ধারণা থেকে শুরু করে একটি জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার বিষয় স্থান পেয়েছে।
ড. ইউনূসের সাথে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অ্যালেক্স কাউন্টস। তিনি বলেন, ড. ইউনূসের বয়স ৮০ বছর, কিন্তু তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো। তার সহানুভূতি রয়েছে এবং তিনি একজন দুর্দান্ত যোগাযোগকারী।
নেচারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে বলা হয়, বাংলাদেশে স্বৈরাচারী সরকারের পতনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীরা শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশের নেতৃত্ব দিতে আমন্ত্রণ জানানোর দাবি জানিয়েছিলেন। এটি ছিলো ইউনূসের জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, ছয় দশকের পেশাজীবনে তিনি কখনও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেননি।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্ম ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। তিনি ১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং পরিবেশগত অর্থনীতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস জর্জেসকু-রোগেনের অধীনে পড়াশোনা করেন।
১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় পাওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তানের নতুন নাম হয় বাংলাদেশ। এর পরপরই তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি নতুন দেশ গঠনে তার ভূমিকা পালন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুগান্তকারী উদ্ভাবন হলো ‘ক্ষুদ্র ঋণ’। ১৯৭০-এর দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালীন তিনি ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। তিনি একটি মডেল তৈরি করেছিলেন যেখানে নারীদের ব্যবসার জন্য অর্থ ধার দেওয়া হয়েছিলো। এই উদ্ভাবনের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন যে সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে, ক্ষুদ্রঋণ সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র অংশের জীবন বদলে দিতে পারে।
ক্ষুদ্র ঋণের ধারণার ওপর ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরবর্তীতে তার ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা সারা বিশ্বে ‘মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এ নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও এই উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. ইউনূস। ১৭ কোটি মানুষের একটি দেশ সংস্কারের দায়িত্ব তার কাঁধে, যা তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি কীভাবে দুর্নীতি দূর করবেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন এবং নাগরিক অধিকার রক্ষা করবেন তা মানুষ জানতে চায়।


















