মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে সমাহিত করা হয়। এর আগে সম্মেলিত সামরিক হাসপাতাল সিএমএইচ -এর হিমাগার থেকে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে।
দাফনে অংশ নেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এসময় তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা স্মৃতিচারণ করে তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বলেন, হাসান আরিফ সারা জীবন নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর মন্ত্রণালয়ে সংস্কারের পাশাপাশি কাজকে করেছেন গতিশীল।
পরিবারের সদস্য তার জন্য দোয়া চেয়েছেন। তার ছেলে মুয়াজ আরিফ বলেন, আমরা এক ভাই, এক বোন, ছোট থেকেই কোর্টের একটা আবহে বড় হয়েছি। বাবার কাছে আমাদের কোনো প্রয়োজন থাকলে কেবল শনিবার বলতে পারতাম। বাবাকে কাছে পেতে শুরু করেছি যখন আমি তার সঙ্গে চেম্বারে কাজ করা শুরু করি। তিনি সবসময় কোর্টে ও চেম্বারেই ব্যস্ত থাকতেন। আইনজীবী হিসেবে তিনি কেমন তা দেশের সবাই জানেন। বাবা সবসময় আমাদের খেয়াল রাখতেন। আমি বিশ্বাস করি, তার রেখে যাওয়া কর্মে দেশ সবসময়ই উপকৃত হবে।
এদিকে উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে আজ দেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। শোক উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রয়েছে। এছাড়া, প্রয়াত হাসান আরিফের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় দেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
হাসান আরিফ ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন।
এরপর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান। একই বছরের ২৭ আগস্ট তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান।
১৯৪১ সালের ১০ জুলাই হাসান আরিফ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক এবং পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি সম্পন্ন করেন।
তিনি কলকাতা হাইকোর্টে ১৯৬৭ সালে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ঢাকায় এসে বাংলাদেশ হাইকোর্টে কাজ শুরু করেন। ২০০১ থেকে ২০০৫ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।