যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানল নিয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক দলীয় গভর্নরের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পানি সংকটের জন্য ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
ইতিহাসের ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি। গত মঙ্গলবার দাবানল শুরুর পর এখন পর্যন্ত তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি লস অ্যাঞ্জেলেস কর্তৃপক্ষ। এই অঞ্চলে আলাদা ছয়টি দাবানলের মধ্যে অনেকগুলোই নিয়ন্ত্রণের পুরোপুরি বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। হারিকেন তীব্রতার বাতাস, শুষ্ক আবহাওয়া এবং পানির চাপ কম থাকায় আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছে দমকল কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে বৃহস্পতিবার বলেন, গ্যাভিন নিউজকামের (গভর্নর নিউসম) পদত্যাগ করা উচিত। সব তার ব্যর্থতা!
তিনি আরও বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ আগুন এটাই বলছে, ২০ জানুয়ারির জন্য আর অপেক্ষার সময় নেই। ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি।
এই পরিস্থিতিকে বাইডেন–নিউজকাম জুটির চরম অক্ষমতা ও অব্যবস্থাপনার প্রতীক হিসেবে প্রকাশ পেতে দিন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
তবে জবাবে বাইডেন বলেন, পানির ঘাটতি নয় বরং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে পানির পাম্পগুলো অফলাইনে চলে গেছে। দাবানলের সময় ত্রুটিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইনের কারণে আরও আগুন লাগার আশঙ্কায় ইউটিলিটি কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারে।
মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আগুনের তীব্রতা দেখে তা নিয়ন্ত্রণ করার বদলে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেয়ার কাজ করছেন মার্কিন ফায়ার ফাইটাররা। ফলে হতাহতের সংখ্যা বেশ কম হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্থনি ম্যারন গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগুন নেভাতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ছয় অঙ্গরাজ্য থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ক্যালিফোর্নিয়ায় আনা হয়েছে। আগুন নেভানোর কাজে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে পানি। প্যাসিফিক প্যালিসেইডস এলাকার কিছু আগুন নেভানোর জন্য পানি সরবরাহের হাইড্রেন্ট শুকিয়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের দুই লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় বুধবার সন্ধ্যায় আগুন দেখা যায় চলচ্চিত্র জগতের তীর্থ স্থান হলিউডে। আগুনে হলিউডের বেশ কয়েকজন তারকার বাড়ি পুড়ে গেছে। বিখ্যাত হলিউড সাইনবোর্ডটির বেশ কাছাকাছি আগুনের শিখা দেখতে পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন লস অ্যাঞ্জেলেস মূল শহরের বাসিন্দারা। এই এলাকায় বেশিরভাগ বাংলাদেশির বসবাস। এই পর্যন্ত তারা নিরাপদে আছেন বলে জানা গেছে।
আগুনে ভস্মীভূত বাড়িঘরে লুটপাট করার খবর পাওয়া গেছে। এই চরম সংকটেও যারা লুটপাট করছে তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন লস এঞ্জেলেসের পুলিশ কর্মকর্তা ক্যাথরিন বার্গারবলেন। লুটপাটের ঘটনায় এরই মধ্যে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আগুনে এ পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রায় দুই হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে শতকোটি ডলারের বাড়িও রয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত সাড়ে তিন লাখ বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দাবানলে এ পর্যন্ত ৫০ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে।