অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই খসড়া রাজনৈতিকদলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে, সবার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় বসবে সরকার। অধিকাংশ বিষয়েই রাজনৈতিক দলগুলো একমত। তবে কিছু বিষয়ে দ্বিমতও রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজস্ব বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে দ্বিমতের জায়গাগুলো পরিষ্কার করবেন।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘আলোচনার স্থান এখনো নির্ধারিত হয়নি। খসড়া ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াত, গণতন্ত্র মঞ্চসহ রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি–পেশার সঙ্গে অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে।
ঘোষণাপত্রটি সবার উপস্থিতিতেই প্রকাশ করা হবে জানিয়ে মাহফুজ বলেন, ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টাসহ রাজনৈতিক দলগুলো উপস্থিত থাকবে।
এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে মতামত দেওয়ার জন্য সময় নিতে চায় বলে জানিয়েছে বিএনপি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিষয়টা এতো বেশি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ যে এটা একদিনের নোটিসে করা সম্ভব না।
এ ব্যাপারে মাহফুজ বলেন, যেহেতু এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সুতরাং খুব বেশি সময় নেওয়া যাবে না।
মাহফুজ জানান, বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে খসড়া হস্তান্তর করা হবে এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। বিকেল তিনটায় ব্রিফিং করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার এই ঘোষণাপত্র অবলম্বনে একটি আইনি ডকুমেন্ট প্রস্তুত করার চিন্তা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে যারাই জিতুক, এই ঘোষণাপত্রকে ধারণ করবেন।
এদিকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিলেও জাতীয় পার্টির মতামত প্রয়োজন মনে করছি না বলে মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করেছে এবং প্রতারিত হয়েছে। জাতীয় পার্টির ভূমিকা সম্পর্কে আমরা সবাই স্পষ্ট। ইতিমধ্যে তাদেরকে কোনো মিটিংয়ে ডাকা হয়নি। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা বা পরামর্শ করা যৌক্তিক মনে করছি না। প্রয়োজনও মনে করছি না।
এর আগে গত ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছিলেন, ঘোষণাপত্র সরকার দেবে না। সরকার ঘোষণাপত্রের প্রক্রিয়াকে সহায়তা করছে। ঘোষণাপত্র আসবে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল।
এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং তখন এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে উল্লেখ করেছিল।
অবশ্য পরে ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।