দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ধনকুবের বিদেশি ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে সেই তিনিই এবার নতুন পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘গোল্ড কার্ড’ নামে এক নতুন অভিভাসন নীতির কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। তবে এই সুবিধা নিতে গুণতে হবে বিরাট অঙ্কের অর্থ, ৫০ লাখ ডলার (প্রায় ৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা)।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ওভাল অফিস থেকে এই ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমরা গোল্ড কার্ড বিক্রি করতে যাচ্ছি, যার প্রত্যেকটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ লাখ ডলার।’
‘এই গোল্ড কার্ড গ্রিন কার্ডের সুবিধা দেবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ারও পথও সুগম করবে। ধনী ব্যক্তিরা এই কার্ড কিনে যক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে পারবেন।’
দুই সপ্তাহের মধ্যে এই কার্ড বিক্রি শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, লাখ লাখ কার্ড বিক্রির আশা করছেন তারা। ট্রাম্পের বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লুটনিক এ সময় ইবি-৫ (গ্রিন কার্ড) প্রোগ্রামের সমালোচনা করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিদ্যমান ইবি-৫ ভিসা কর্মসূচির জায়গায় নতুন এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।
তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে আবেদনকারীদের ভেটিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তারা বিশ্বস্ত কিনা তা যাচাই করা হবে।’
রুশ ধনকুবেররাও এ গোল্ড কার্ড পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন কি না—জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, তা তো হতেই পারে! বেশ কয়েকজন রুশ ধনকুবেরকে আমি চিনি, তারা তো বেশ ভালো মানুষ।’
১৯৯২ সালে প্রথম ইবি-৫ কর্মসূচি চালু করে মার্কিন কংগ্রেস। এতে ন্যূনতম ১০ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোতে (টিইএ) কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে ৮ লাখ ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদেশি নাগরিকদের গ্রিন কার্ড পাওয়ার সুযোগ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেতেন বিদেশিরা।
ট্রাম্প ও তার পরিবারের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরাও এই কর্মসূচির সুবিধা নিয়ে বড় বড় কিছু প্রকল্পে অর্থায়ন করেছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তবে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসে এই কর্মসূচিটি নিয়ে সমালোচনা ওঠে। যে লক্ষ্যে ইবি-৫ চালু করা হয়েছিল, সেখান থেকে এটি সরে যাচ্ছে বলে সে সময় অভিযোগ করা হয়। সমালোচকরা কর্মসূচিটির সংস্কার দাবি করেন।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে টিইএতে ন্যূনতম বিনিয়োগ ৯ লাখ ডলার এবং অন্যান্য এলাকায় ১৮ লাখ ডলারে উন্নীত করার চেষ্টা করলেও ২০২১ সালে এক ফেডারেল জজ এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন।
এরপর ২০২২ সালে প্রোগ্রামটি আবার চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় বাইডেন প্রশাসন। বর্তমান বিনিয়োগ শর্তাবলী বাইডেনের আমলেই কার্যকর করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেই অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে একের পর এক নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প। এ সময় তিনি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের আইন বাতিল করেন, সীমান্তে জারি করেন জরুরি অবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান।
এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের আটক করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ সময়ে অভিবাসীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণেরও অভিযোগ উঠেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের এই ‘গোল্ড কার্ড স্কিম’ যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ট্রাম্প এটিকে সরকারের জন্য বিপুল রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি ধনী ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করার হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন।
তবে কংগ্রেসে এই পরিকল্পনা বিতর্কের জন্ম দিতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত অভিবাসন ব্যবস্থার ওপর এর প্রভাব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।