মারধরের ঘটনায় জড়িত এমআরটি পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগের পর মেট্রোরেলের কর্মীরা কাজে ফিরেছেন। ফলে আড়াই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সোমবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে একক যাত্রার টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়। অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, “এমআরটি পুলিশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা কাজে ফিরে এসেছেন।”
টিকেট বিক্রি শুরু, স্বাভাবিক হচ্ছে কার্যক্রম
মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, কর্মীরা টিকেট বিক্রি শুরু করেছেন।
একজন টিকেট মেশিন অপারেটর (টিএমও) বলেন, “আমাদের এমডি স্যার এসে জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই আমরা আবার কাজে নেমেছি।”
কী ঘটেছিল?
রোববার বিকেলে সচিবালয় স্টেশনে এমআরটি পুলিশের সদস্যরা মেট্রোরেল কর্মকর্তাদের মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। গভীররাতে ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ’ ব্যানারে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়।
মেট্রোরেল কর্মীদের অভিযোগ, রোববার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে দুই নারী সাদা পোশাকে কোনো পরিচয়পত্র ছাড়াই বিনা টিকেটে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেন। পরে তারা সুইং গেইট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চাইলে দায়িত্বে থাকা কাস্টমার রিলেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট (সিআরএ) বিষয়টি জানতে চান।
এতে পুলিশের কর্মকর্তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং পরে কন্ট্রোল রুমে চলে যান। কিছুক্ষণ পর আরও কয়েকজন পুলিশ এসে তর্কে লিপ্ত হন এবং একপর্যায়ে কর্মরত এক টিএমও’র কলার ধরে এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন। অভিযোগ রয়েছে, তখন এক পুলিশ সদস্য গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করেছিলেন।
এই ঘটনার পর এক কর্মী আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কর্মবিরতির কারণ ও দাবিসমূহ
এই ঘটনার পর মেট্রোরেল কর্মীরা ছয় দফা দাবি তুলে কর্মবিরতি শুরু করেন। দাবিগুলোর মধ্যে ছিল—
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে।
বাকি পুলিশ সদস্যদের শান্তি দিতে হবে ও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
মেট্রোরেল, কর্মী ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য স্বতন্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করতে হবে।
এমআরটি পুলিশ বিলুপ্ত করতে হবে।
স্টেশনে কর্মরত সকল কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আহত কর্মীর চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়ভার কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
এমআরটি পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
এমআরটি পুলিশের ডিআইজি সিদ্দিকী তানজিলুর রহমান জানিয়েছেন, “ওই ঘটনায় অভিযুক্ত এমআরটি পুলিশের একজন ওসিকে ক্লোজ করা হয়েছে এবং একজন এসআইকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। যেহেতু তারা অন্যায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এমন ঘটনায় ভবিষ্যতে যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।