রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

বিএনপি চেনা পথেই হাঁটছে

প্রবাদ আছে, ‘রাজনীতিতে এক সপ্তাহ একটা লম্বা সময়’। কয়েক সপ্তাহ আগেও যেসব জিনিস মনে হচ্ছিল সহজভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এখন ধীরে ধীরে সেগুলো জটিল হচ্ছে। রাজনীতিতে অনেক অংশীদার—সরকারে ও বাইরে, তাদের সবার ভেতর কেমন একটা অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন দিন দিন রাজনীতির মেরুকরণ আরও জটিল হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকার কত দিন থাকবে, এ বিতর্ক কখনো প্রকাশ্যে, কখনো বা আড়ালে চলছেই। পেন্ডুলাম দুলছে এক বছর ও পাঁচ বছরের মধ্যে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চলতি বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে। তবে অনেকেই মনে করেন, এই সময়সীমার একটা বড় শর্ত হলো, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে সংস্কার প্রশ্নে ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে একমত হবে। যদি তারা একমত না হতে পারে, তাহলে কী হবে?

মাঝেমধ্যে পাঁচ বছরের দিকে পেন্ডুলাম দুলছে। সেটাও আসছে সরকারের কাছের লোকদের থেকে, জুলাই আন্দোলনে জড়িত নেতাদের থেকে এবং সবচেয়ে বেশি সোচ্চার বিদেশে থাকা কতিপয় ইউটিউবার, যাঁদের কথা এ দেশে অনেকেই মন দিয়ে শোনেন। গত ১৫ মার্চ এক বক্তব্যে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জুলাইয়ের নেতাদের বলেন, ‘আরও অন্তত পাঁচ-দশ বছর তোমরা আমাদের নেতা থাকো।’ জুলাইয়ের নেতারা কিছু আছেন এখন সরকারে, কিছু সরকারের বাইরে। কাকে তিনি উদ্দেশ করেছেন?

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ১০ এপ্রিল বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এই সরকারকে আরও পাঁচ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে দেখতে চাইছে’। সরকারের আরেক উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরা অনির্বাচিত, এই কথা কে বলল?’

এগুলো সরকারের পক্ষে কোনো সমন্বিত প্রচেষ্টা হয়তো নয়। তবে এই পরিমণ্ডলে আকাঙ্ক্ষা আছে অন্তর্বর্তী সরকারকে দীর্ঘায়িত করার। এনসিপি নেতা সারজিস আলমও সম্প্রতি বলেছেন, ‘প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন স্টেটসম্যানকে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের একটি নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার আজীবন থাকবে।’ কেউ কেউ বিএনপির সঙ্গে কোয়ালিশন বা হ্যাঁ-না ভোট—এই সব বিকল্পও তুলে ধরছেন।

যাঁরা এ দেশের রাজনীতিবিদদের ওপর খুব ভরসা রাখেন না, তাঁদের এই সব আলোচনা ও আকাঙ্ক্ষা থাকবেই। তাই বলে রাজনীতিবিদেরা বসে থাকবেন কেন?

মোহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইতিহাসে ‘সেরা নির্বাচন’ করবে। তাঁর এই উক্তিকে অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তবে একটা নির্বাচন ভালো হলেই সংস্কার সফল হবে, তা ভাবার কারণ নেই। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের অন্তর্বর্তীকালে একটা সুন্দর নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছিল। তারপর রাজনীতিকেরা সব তছনছ করলেন।
সংস্কার

ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছে। কোথায় কী সংস্কার এবং এতে লাভ কী হবে, তা নিয়ে জনগণ অনেকটা অন্ধকারে। তবে যেটুকু জানা গেছে সংবাদপত্রে, জাতীয় মূলনীতি, জুলাই সনদ ইত্যাদি নিয়ে কথা হচ্ছে। জাতীয় পরিচিতিও পোক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।

দেশের সংবিধানে সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বহুত্ববাদ, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার কী লেখা আছে বা কী লেখা হলে খুব একটা বড় সংস্কার হবে, তা নিয়ে আমরা বেশি সময় নষ্ট করছি। বিশ্বের অনেক দেশে কোনো লিখিত সংবিধান নেই। কিন্তু তাদের দেশ ও সরকার ভালোভাবেই চলছে।

কাগুজে পরিবর্তনের চেয়ে বেশি প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার গত তিনটা নির্বাচন যেভাবে করেছে, তা বর্তমান সংবিধানের কোথাও লেখা নেই। হাসিনা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পদ্ধতিটাও তাঁর দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে নাকচ করিয়ে নিলেন।

তাই বলে সংস্কার লাগবে না? অবশ্যই লাগবে, শুধু যেগুলো অর্থবহ হবে দেশের জনগণের জন্য। তার একটা হলো—স্বাধীন বিচার বিভাগ, অন্যটা রাজনীতিবিদদের ধরাছোঁয়ার বাইরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাঠামো। এই দুই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারলে দেশ অনেক উপকৃত হবে।

মোহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইতিহাসে ‘সেরা নির্বাচন’ করবে। তাঁর এই উক্তিকে অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তবে একটা নির্বাচন ভালো হলেই সংস্কার সফল হবে, তা ভাবার কারণ নেই। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের অন্তর্বর্তীকালে একটা সুন্দর নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছিল। তারপর রাজনীতিকেরা সব তছনছ করলেন।

সংস্কার নিয়ে বিএনপির খুব উৎসাহ নেই, তারা তা খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছে। তারা চায়, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন। সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষিতে তারা নরম-গরম দুই সুরই বজায় রাখছে। বিএনপি নেতা তারেক জিয়া বলেছেন, ‘এয়ারকন্ডিশনের ভেতরে বড় বড় দামি অফিসে বসে তারা সংস্কারের কথা বলছে’। আসলে আজকাল সব বড় রাজনৈতিক নেতাই গুলশান-বনানীতে এয়ারকন্ডিশন বাড়িতে থাকছেন, পাঁচতারা হোটেলে তাঁদের ইফতার পার্টি হচ্ছে।

রাজনীতির এই পরিবর্তিত সময়ে বিএনপি নিজেদের কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। সেই পুরোনো দিনের হানাহানি, চাঁদাবাজি ও দখলদারি দিন দিন বাড়ছে। আগে অপকীর্তিকারীদের বহিষ্কার করা হতো, আবার দলে টানা হতো, সেই সবও এখন থেমে গেছে। বিএনপিকে নিয়ে জনগণের প্রশ্ন বাড়ছে। নতুন রাজনীতির সঙ্গে তাল মেলাতে হলে তাদের নতুন কিছু করতে হবে।

এনসিপি জাতীয় রাজনীতিতে সব বিষয়ে দারুণ সোচ্চার। ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ নিয়ে তাদের উৎসাহ সম্ভবত কিছুটা কমেছে। তবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আমূল পরিবর্তন চায় তারা। অধ্যাপক ইউনূসের দেওয়া নির্বাচনী সময়সীমার মধ্যে এই পরিবর্তন সম্ভব কি না, তা নিয়ে হিসাব-নিকাশ না করেই তারা পরিবর্তনটা আগে চায়। আগেভাগে নির্বাচন নিয়ে ইসির তৎপরতা ও প্রস্তুতিতে এনসিপি সন্দেহ প্রকাশ করেছে এবং তা তারা ইসিকে জানিয়ে দিয়েছে। আসলে দলীয় কার্যক্রমে তারা অনেক পিছিয়ে। নির্বাচন যত পেছাবে, তারা আরও সময় পাবে দল গোছানোর।

সম্প্রতি এনসিপির তৃতীয় সাধারণ সভা হয়েছে দলীয় কার্যালয়ে। এই সভা নিয়ে একটি বাংলা দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাধারণ সভায় দলীয় কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেউ কেউ। তাঁরা বলেন, নানা কর্মকাণ্ডে আমাদের ৬০ ভাগ রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে। বাকি ৪০ ভাগ কতটুকু ধরে রাখতে পারব, এটা নিয়েও শঙ্কা আছে।’

এই সভা নিয়ে যে যেভাবে রিপোর্ট করুক না কেন, দুটো জিনিস পরিষ্কার—এনসিপির ভেতরে সব ভালো যাচ্ছে না এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র এনসিপিতেই কর্মীরা খোলাখুলি নেতাদের সমালোচনা করতে পারেন। এনসিপি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতিতেও সমানতালে সচল।

সাম্প্রতিক রাজনীতির সবচেয়ে বড় খবর হলো, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান লন্ডনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। তারেক জিয়ার বাসায় ও তাঁর উপস্থিতিতে এ সাক্ষাৎ ঘটেছে। কিছু বিষয়ে নিশ্চিতভাবে তাঁরা একমত হয়েছেন। দুই দলের মধ্যে যে বাক্যযুদ্ধ ও বিষোদ্‌গার চলছিল, তা বন্ধ করা এবং নির্বাচনের সময়সূচির ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর দাবি এখন বিএনপির সঙ্গে মোটামুটি সমন্বিত। এই ঐকমত্যের সূত্র ধরে সামনে কোনো নির্বাচনী ঐক্য হবে কি না, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশের নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি যাঁরা অনুসরণ করেন, তাঁরা জানেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, রাজনৈতিক দলগুলো তত জোটবদ্ধ হবে। সম্ভবত দুটো জোট গঠিত হবে। একটা বিএনপির নেতৃত্বে, দ্বিতীয়টায় থাকবে এনসিপি। জাতীয় গ্র্যান্ড কোয়ালিশন ছাড়া এই দুই দলের একজোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

জামায়াতে ইসলামী এর মধ্যেই ৩০০ আসনে তাদের প্রার্থী বাছাই করে রেখেছে। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে সরকারে যেতে তারা যেকোনো একটা জোটে যোগ দিতে পারে। বাম দলগুলো ছাড়া, বর্তমানে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন কোনো বড় আদর্শগত বিরোধ নেই, কেউ কারও জন্য অচ্ছুত নয়। এরা সবাই ‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশে একই মঞ্চে দাঁড়িয়েছিল। ক্ষমতার অংশীদার হতে অন্য দলগুলো এই দুই জোটের একটাকে বেছে নেবে। তবে কে কোনদিকে ঝুঁকবে, তা বুঝতে আরও সময় লাগবে।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!