শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী আজ। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ দেশের সব মন্দিরেই সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সপ্তমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
পূজামণ্ডপে নবপত্রিকা স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এদিনের আনুষ্ঠানিকতা। ‘নবপত্রিকা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ৯টি গাছের পাতা। কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান— এই ৯টি উদ্ভিদকে পাতাসহ একটি কলাগাছের সঙ্গে একত্র করা হয়। নবপত্রিকার আরেক নাম হলো কলা বৌ স্নান।
নবপত্রিকার ৯টি উদ্ভিদ প্রকৃতপক্ষে দেবী দুর্গার ৯টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে বিবেচনা করা হয়। এই ৯ দেবী একত্রে ‘নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা’ নামে ‘নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমোঃ’ মন্ত্রে পূজিত হন।
এর আগে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলতলায় চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুর্গাষষ্ঠীর। রাজধানীসহ সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাক-কাঁসর, ঘণ্টা, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে ষষ্ঠী উদযাপন করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
ষষ্ঠী থেকে দূর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও আজ মহাসপ্তমী থেকেই মূল পূজা শুরু। কাল মঙ্গলবার মহাষ্টমী ও কুমারীপূজা এবং বুধবার মহানবমী শেষে বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব।
সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, এবার জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা গজে (হাতি) চড়ে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন (আগমন); যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে। দেবী স্বর্গালোকে বিদায় (গমন) নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে; যার ফল হচ্ছে মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে।
দুর্গোৎসব মূলত পাঁচ দিনের হলেও এর শেষ হয় কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় গিয়ে। এর রেশ থাকে শ্যামাপূজা পর্যন্ত। টানা এই লম্বা সময় নানা আনন্দ, উপাচারে মেতে থাকেন সনাতনীরা।
রাজধানীতে এবার মোট ২৫৯টি মন্দির-মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় সাতটি বেশি। এছাড়া সারাদেশে মোট মন্দির-মণ্ডপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় এক হাজার মণ্ডপের বেশি।
এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সীমান্তবর্তী এলাকা এবং ঢাকাসহ সারাদেশের দুই হাজার ৮৫৭টি পূজামণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৪৩০ প্লাটুন সদস্য।
এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। দুর্গাপূজায় কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট বা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা হলে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

















