ইসরাইল সরকার শুক্রবার ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি অনুমোদন করেছে। এই চুক্তি গাজায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করবে এবং পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় আটক ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরাইলি মন্ত্রিসভা শুক্রবার ভোরে এই চুক্তি অনুমোদন করে, যা মধ্যস্থতাকারীদের ঘোষণার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর। চুক্তিতে ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের প্রথম ধাপ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে দুই বছরের যুদ্ধ বন্ধের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর এক্স অ্যাকাউন্টে বলা হয়, সরকার এইমাত্র সমস্ত জিম্মি, জীবিত ও মৃতদের মুক্তির কাঠামো অনুমোদন করেছে।
এই যুদ্ধ ইসরাইলের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতাকে আরও গভীর করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিয়েছে, যাতে ইরান, ইয়েমেন ও লেবানন জড়িয়ে পড়েছে। যুদ্ধ মার্কিন-ইসরাইল সম্পর্কের ওপরও চাপ সৃষ্টি করেছে, যেখানে ট্রাম্প নেতানিয়াহুর প্রতি অধৈর্য হয়ে চুক্তির জন্য চাপ দিয়েছেন।
ইসরাইনি ও ফিলিস্তিনি উভয় পক্ষই চুক্তির ঘোষণার পর উল্লাস প্রকাশ করেছে। এটি দুই বছরের যুদ্ধ বন্ধের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ, যেখানে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং হামাসের ২০২৩ সালের সাত অক্টোবরের হামলায় ১২০০ ইসরাইলি নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়েছিলো।
হামাসের নির্বাসিত গাজা প্রধান খলিল আল-হায়া বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে যুদ্ধ শেষ হওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছেন। ইসরায়েলি সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, চুক্তি অনুমোদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মিরা মুক্ত হবে। বর্তমানে গাজায় ২০ জন ইসরাইলি জিম্মি জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া ২৬ জন মৃত এবং দুজনের ভাগ্য অজানা।
চুক্তি কার্যকর হলে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তাবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে, যেখানে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় বাড়িঘর ধ্বংস ও শহরগুলো বিধ্বস্ত হওয়ায় লাখো মানুষ তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে।
ট্রাম্প রোববার এই অঞ্চলে যাবেন এবং মিশরে একটি সম্ভাব্য স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। ইসরিইলি কনেসেটের স্পিকার আমির ওহানা তাকে কনেসেটে বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যা ২০০৮ সালের পর প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন বক্তৃতা হবে।
পশ্চিমা ও আরব দেশগুলো প্যারিসে একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী ও গাজার পুনর্গঠন সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০ সেনাকে গাজার স্থিতিশীলতার জন্য একটি যৌথ টাস্ক ফোর্সের অংশ হিসেবে মোতায়েন করবে, যেখানে মিশর, কাতার, তুরস্ক এবং সম্ভবত সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে এটি যুদ্ধ বন্ধের সবচেয়ে কাছাকাছি পদক্ষেপ হবে। তবে, অনেক বাধা রয়ে গেছে। ফিলিস্তিনি সূত্র জানায়, মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দীদের তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। হামাস উল্লেখযোগ্য ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ, যেমন গাজার শাসন ব্যবস্থা ও হামাসের ভাগ্য, এখনো আলোচিত হয়নি।
নেতানিয়াহুর জোটের মধ্যেও সংশয় রয়েছে। অতি-ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির হামাস নির্মূল না হলে সরকার ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
গাজার খান ইউনিসের আব্দুল মাজিদ আব্দ রাব্বো বলেন, `যুদ্ধবিরতি ও রক্তপাত বন্ধের জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। পুরো গাজা, আরব জনগণ, বিশ্ব এই যুদ্ধবিরতিতে খুশি।’
তেল আবিবের ‘হোস্টেজ স্কয়ারে’ জিম্মি মাতানের মা এইনাভ জাউগাউকার বলেন, আমি শ্বাস নিতে পারছি না, আমার অনুভূতি বোঝাতে পারছি না… এটা অবিশ্বাস্য।’

















